মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বাগেরহাটের কেবি বাজার

‘অবরোধের সময় বাংলাদেশি জেলেরা সাগরে মাছ ধরে না। কিন্তু ভারতীয় বড় ফিশিং ট্রলারগুলো নিয়মিতই মাছ ধরে থাকে এই সময়ে। ফলে দীর্ঘদিন মাছ আহরণ বন্ধ থাকলেও সুবিধাবঞ্চিত আমরা। এবার অবরোধের পরে সাগরে গিয়ে তেমন মাছ পাইনি। তাহলে ৬৫ দিন বাড়িতে বসে থেকে আমাদের লাভ কী হলো?’

আক্ষেপের সুরে এমনটা বলছিলেন সাগর থেকে মাছ আহরণ করে বাগেরহাট কেবি বাজারে বিক্রি করতে আসা জেলে কবির হোসেন।

অন্য জেলে মো. শুকুর তালুকদার বলেন, ‘সরকারের অবরোধকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু এই অবরোধের সময় ভারতীয়রা এসে জাল দিয়ে বাংলাদেশি সীমানার মাছ ধরে নিয়ে যায়। তাদের আমরা কিছু বলতে পারি না। যখন অবরোধে থাকে না, তখনো তাদের তাণ্ডব থাকে আমাদের সীমানায়। এসব তাণ্ডব বন্ধে বাংলাদেশি সমুদ্রসীমায় নৌবাহিনীর টহল বৃদ্ধির দাবি জানান এই জেলে।

সাগরে সব ধরনের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল সরকার। এ নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ২৩ জুলাই মধ্যরাতে। এরপরই জাল নিয়ে সমুদ্রে নামেন জেলেরা। তবে সাগরে মাছ কম পাওয়ায় হতাশ এ অঞ্চলের জেলে ও ব্যবসায়ীরা। জেলেদের ঠিকানা দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বাগেরহাটের কেবি বাজারে নেই আগের মতো চিরচেনা ব্যস্ততা।

রোববার (২৫ জুলাই) সকালে বাগেরহাট দড়াটানা নদীর তীরে শহররক্ষা বাঁধ-সংলগ্ন কেবি বাজারে জেলে, পাইকার, আড়তদার ও মাছ ক্রেতাদের হাঁকডাক শোনা যায়। কেউ ট্রলার দিয়ে ঝুড়িতে করে মাছ নিয়ে আসছেন। কেউ আবার পাইকার ডাকছেন। কেউ মাছ কিনে ফিরছেন গন্তব্যে।

কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হওয়া এই সামুদ্রিক মাছ বিক্রয় কেন্দ্রে প্রতিদিন বিকিকিনি হয় কোটি টাকার মাছ। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বেচাকেনা হয় ইলিশের। পাশাপাশি কাউয়া, চেলা, ঢেলা চেলা, লইট্টা, ভোল, কঙ্কন, কইয়া ভোল, জাবা ভোল, মোচন গাগড়া, মেইদ, টেংড়া, রুপচাঁদা, বোতলসহ প্রায় ৫০ প্রজাতির মাছ বিক্রি হয় এখানে।

সাগর থেকে আহরিত কেজি কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকা করে। ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা দরে। ৪ থেকে ৬ পিস ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে।

অন্যদিকে সরাসরি সাগর থেকে আহরিত মাছের পাশাপাশি বিদেশি হিমায়িত মাছও বিক্রি হয় এই হাটে। ফলে দেশীয় সামুদ্রিক মাছের কাঙ্ক্ষি দাম পান না বলে দাবি জেলেদের।

এবাদুল নামের এক জেলে বলেন, অবরোধের পর সাগরে গিয়ে তেমন মাছ পাইনি। যে মাছ পাইছি, তাতে হয়তো খরচটা উঠবে। আর লকডাউনের কারণে মাছের দামও ভালো নাই।

কেবি বাজারে শ্রমিকের কাজ করা সুশান্ত-মনিরুল বলেন, ট্রলার থেকে মাছ ওঠানো, বাছাইসহ বিভিন্ন কাজ করে আমরা খাই। কিন্তু অবরোধ, মাছ ও দাম কমসহ বিভিন্ন কারণে আমদের আয় দিন দিন কমছে। এভাবে চলতে থাকলে কেবি বাজারের কাজ বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

বাগেরহাটের লক্ষাধিক মানুষ সামুদ্রিক মাছ আহরণ ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত জানিয়ে বাগেরহাট উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী বলেন, এবার অরোধের পরে জেলেরা সমুদ্রে তেমন মাছ পাননি। আর বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকের ফিরে আসতে হয়েছে। বেশির ভাগ ট্রলার-মালিককে এই দফায় লোকসান গুনতে হবে বলে দাবি করেন মৎস্যজীবী সমিতির এই নেতা।

তানজীম আহমেদ/এনএ