২৮ কেজি ওজনের ভোল মাছ

‘করোনার জন্য গেলবার অনেক লস হইছে। এ বৎসর লাভ হয় কিনা জানি না, তয় লোকসান হইবে না। আল্লাহর রহমে ভোল মাছটা লসের হাত দিয়া বাঁচাইয়্যা দিছে।’

রোববার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় মুঠোফোনে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বরগুনার পাথরঘাটার মৎস্য ব্যবসায়ী মাছুম কোম্পানির মালিক মাছুম আকন।

তিনি বলেন, কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ বছর পর এত বড় মাছ এই অঞ্চলে কারও জালে উঠল। সেটির সৌভাগ্যবান আমি, ভাবতেই ভালো লাগছে। মাঝিরা যখন খবর দিয়েছিল তখন আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া আদায় করেছি। সমুদ্র কাউকে ফকির করে দেয়, কাউকে সামর্থ্যবান করে দেয়। আল্লাহর রহমত ছিল বিধায় এতো বড় মাছ আমাদের ফিশিংবোটের জালে ধরা পড়েছে।

মাছুম আকন বলেন, ভোল মাছ হলো গভীর সমুদ্রের মাছ। আমরা যে মাছটি পেয়েছি তার ওজন ২৮ কেজি। ১৬ হাজার ৫২৫ টাকা কেজি দরে ৪ লাখ ৬২ হাজার টাকায় খুলনার এক পাইকারী ব্যবসায়ী মাছটি কিনে নিয়েছেন। করোনার কারণে অনেক কম দামে মাছটি ছাড়তে হয়েছে। যদি করোনা বা লকডাউন না থাকত, গাড়ি চলাচল করত তাহলে কমপক্ষে ২১ হাজার টাকা কেজি দরে প্রায় পৌনে ছয় লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম। তবে যে দামেই বিক্রি করি, আফসোস নেই। 

তিনি আরও বলেন, আমার মালিকানাধীন মাছুম কোম্পানির ছয়টি ফিশিং বোট সমুদ্রে যায়। গত বছর করোনা আর লকডাউনের কারণে সেগুলো সমুদ্রে যেতে পারেনি। পুরো লোকসান গুনেছি। এ বছর ফিশিংবোট সমুদ্রে আর না যেতে পারলেও লোকসান হবে না। ভোল মাছটি ধরা পড়ায় দুশ্চিন্তা কমছে।

এই মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) মাঝরাতে মাঝিরা জানান তারা পাথরঘাটা ফিরে আসছেন। বিশাল একটি ভোল মাছ পেয়েছেন। যে ট্রলারের মাঝিরা মাছটি পেয়েছিলেন সেটির নাম ছিল এফবি আলাউদ্দিন হাফিজ-৪। ট্রলারের মাঝি আবু জাফর মোবাইলে জানান, ভোল মাছটির ওজন ২৫/৩০ কেজি হবে। ট্রলার চালিয়ে তারা শনিবার (২৪ জুলাই) ভোররাতে ঘাটে পৌঁছে। ওইদিন সকাল থেকে বিএফডিসি ঘাটে ওপেন ডাক হয়। দুপুর ১২টার দিকে মাছটি বিক্রি হয়। ডাকে সর্বোচ্চ দাম দিয়ে মাছটি পান খুলনার ব্যবসায়ী জুয়েল।

এফবি আলাউদ্দিন হাফিজ-৪ ট্রলারের মাঝি আবু জাফর বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কাটলেও এখন আমরা বৈরী আবহাওয়ার কারণে সমুদ্রে যেতে পারছি না। আবহাওয়া ভালো না হলে সমুদ্রে যাওয়া হবে না। আমরা আগে বছরের ৮ মাস মাছ ধরতাম। এখন দুই মাস মাছ ধরার সময় পাই। সেই সময়ও নষ্ট হচ্ছে বৈরী আবহাওয়া, লকডাউনসহ বিভিন্ন কারণে। অথচ আমাদের দেশে যখন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শুরু হয় তখন ভারতে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়। এতে করে আমরা মাছ ধরতে না পারলেও ভারতীয়রা কিন্তু আমাদের মাছ ধরে নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, অনেক বছর ধরে ট্রলারে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাই। কিন্তু এতো বড় মাছ আমার জীবনে এই প্রথম ধরলাম। মাছটি জালে যখন আটকা পড়ে তখন পুরো ট্রলার কাঁপিয়ে ফেলে।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে সুন্দরবনের একটি নদীতে ২২ কেজি ওজনের ভোল মাছ পেয়েছিলেন সুকুমার বহাদ্দর। বিএফডিসি ঘাটের ছগির মিয়ার আড়ত থেকে মাছটি আড়াই লাখ টাকায় কিনেছিলেন ব্যবসায়ী ইউসুফ মিয়া।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস অফিদফতরের উপ-পরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন, ভোল মাছের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। এই মাছটিকে সামুদ্রিক মেটে বা আঞ্চলিক ভাষায় মাইট্যা অর্থাৎ মাটির রংয়ের ভোল বলা হয়। দেশি বোল বা দেশি ভোল (বৈজ্ঞানিক নাম- Raiamas bola) হচ্ছে Cyprinidae পরিবারের মাছ। জেলেরা পূর্ণ বয়স্ক ভোল মাছ ধরতে পারবেন। তবে নিষেধাজ্ঞার ৬৫ দিনে কোনো মাছই ধরতে পারবেন না।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর