করোনা রোগী ভর্তি না করায় চিকিৎসকের ওপর হামলা, আটক ১
কুমিল্লায় করোনা রোগী ভর্তি না করায় রোগীর স্বজনদের হামলার শিকার হয়েছেন চিকিৎসক তানভীর আকবর। গতকাল রোববার রাত ৯টায় কুমিল্লা নগরীর নোয়াপাড়া এএফসি ফরটিস হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এসময় হাসপাতাল ভাঙচুর ও দায়িত্বরত কয়েকজনের ওপর হামলা চালানো হয়।
সোমবার রাত ২টায় হামলার শিকার ডাক্তার তানভীর আকবর নিজে বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫ জনের নামে মামলা দায়ের করা করেন। মামলার পর অভিযান চালিয়ে ২নং আসামী মো. অনন্তকে (২৫) আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) কমল কৃষ্ণ ধর।
বিজ্ঞাপন
মামলার সূত্র জানা যায়, করোনা আক্রান্ত রোগী হোসাইনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় কুমিল্লা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিট থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা ঢাকায় আইসিইউতে স্থানান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু রোগীর স্বজন কোথাও আইসিইউ না পেয়ে রোববার রাত সাড়ে ৮টায় ফরটিস হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি নিতে রাজি হয়নি। রোগীর স্বজন জোরপূর্বক চাপ প্রয়োগ করে। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে ৫-৬ জন মিলে ডাক্তার তানভীর আকবরকে প্রথমে কিল ঘুষি দিতে থাকে। পরবর্তীতে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়।
বিজ্ঞাপন
ডা. তানভীর আকবর জানান, জরুরি বিভাগে রোগীটি আসার পর চেকআপ করি। তার অবস্থায় খারাপ হওয়ায় রোগীর স্বজনদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হাইফ্লু ন্যাজাল ক্যানুলা ও আইসিইউ সমৃদ্ধ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু তারা হাসপাতালে ভর্তির জন্য বার বার চাপ প্রয়োগ করে। এক পর্যায়ে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। এসময় আমাকে বাঁচাতে এলে হাসপাতালের কয়েকজনকেও মারধর করা হয়। এছাড়া হাসপাতালের সম্পদের ক্ষতি সাধন করে ও অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে সটকে পড়ে। এ ঘটনায় রাতেই মামলা করেছি।
দ্রুত সময়ের মধ্যে একজনকে আটক করায় সদরের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিএমএর নেতৃবৃন্দদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আশা করি পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে বিএমএ-র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আতাউর রহমান জসীম বলেন, কর্তব্যরত চিকিৎসকের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা এবং দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না করলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা করা হবে। দেশের এ পরিস্থিতি আমাদের চিকিৎসকরা এমনিতেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তার ওপর এমন হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কুমিল্লার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ক্ষুব্ধ হলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে।
কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, মামলা দায়েরের পর রাতেই অভিযান পরিচালনা করে হামলার সঙ্গে জড়িত একজনকে আটক করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে কয়েকটি টিম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হব।
অমিত মজুমাদর/এমএএস