দেশের মানুষের কর্মক্ষেত্রের বড় নগরী রাজধানীর ঢাকা। কাজে যোগ দিতে হবে, যেতে হবে ঢাকায়। জীবিকার তাড়না লকডাউনকে হার মানায়। হার মানায় বৈরী আবহাওয়াকেও। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শত শত মানুষ তাই বৃষ্টি মাথায় নিয়েও পার হচ্ছে পদ্মা নদী।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) সকাল থেকেই ঢাকাগামী যাত্রীর ভিড় রয়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। ফেরিতে পার হওয়া যানবাহনের সংখ্যা কম, তবে সেই জায়গা দখল করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। লঞ্চ, স্পিডবোট বন্ধ রয়েছে। ফলে পদ্মা পার হওয়ার একমাত্র উপায় এখন ফেরি। সে কারণে ফেরিতেই যাত্রীর ঢল নেমেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে কার্যত লকডাউন দেশের বিভিন্ন এলাকা। চলছে না দূরপাল্লার কোনো পরিবহন। তবে এরই মধ্যে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা খুলে দেওয়ার খবরে চাকরি বাঁচাতে ছুটতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
  
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নআয়ের মানুষ, যারা পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে তাদের বড় একটা অংশই ঢাকার উদ্দেশে কয়েক দিন ধরেই যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও তাদের যাত্রা থেমে নেই। পথে পথে ছোট যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে পৌঁছান তারা। এখানে ফেরিতে করে পদ্মা পার হতে হচ্ছে এই যাত্রীদের।

এদিকে বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই বৈরী আবহাওয়া শুরু হয়। বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস বইতে থাকে। এই আবহাওয়ার মধ্যেই দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই পদ্মা পার হচ্ছে শত শত যাত্রী।

পাংশা থেকে পরিবারসহ দোলতদিয়া ঘাটে এসেছেন আসিফ রহমান। ঘাট এলাকায় কথা হয় তার সঙ্গে। একদিকে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি, অন্যদিকে ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কেন যাচ্ছেন ঢাকা? আলাপকালে তাকে এ প্রশ্ন করা হয়।

জবাবে তিনি বলেন, পেটের ক্ষুধার জন্য যাচ্ছি। বাড়িতে এই কদিন তো ছিলাম। কাজ না করলে খাবার আসবে কোথা থেকে? করোনার চেয়েও পেটের ক্ষুধা বড়। কাজে যেতে না পারলে হয়তো চাকরিও থাকবে না।

ঝিনাইদাহ থেকে আসা এক ব্যক্তি বলেন, ‘ত্রাণের চালে কয় দিন চলে? ইনকাম বন্ধ। অথচ খাওনের মুখ তো বন্ধ হয় না। এইভাবে আর কয় দিন চলা যায়?’

ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, সকাল থেকেই ঢাকাগামী যাত্রীরা ঘাটে আসছে। সকাল থেকে থেমে ঝড়বৃষ্টি থাকায় ফেরিতে করে সব যাত্রী পার হচ্ছে। ঘাটে দায়িত্বরত পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ যাত্রী পারাপার ফেরিতে পুরোপুরি বন্ধ। এরপরও যাত্রীরা জরুরি কাজের নানা অজুহাত দেখাচ্ছে।

কেউ বলছেন অসুস্থ, কেউ বলছেন রোগী দেখতে যাবে, কেউবা বলছেন চাকরি বাঁচাতে হলে ঢাকায় যেতেই হবে। আমরা নিষেধ করলেও তারা ফেরিতে ওঠে যাচ্ছে। কিছু যাত্রীকে কোনোভাবেই আটকে রাখা যাচ্ছে না বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডাব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে ঝোড়ো বৃষ্টি হওয়ায় ফেরিতে যানবাহন কম। তাই সকাল থেকে সাধারণ যাত্রীরাই পার হচ্ছে।

মীর সামসুজ্জামান/এমএসআর