পাঁচ গুণ ভাড়া দিয়েও ভরসা এখন ট্রাক
‘টেকেরহাট থেকে ফরিদপুরের বাস ভাড়া ৬৫ টাকা। তাও বইসা আরামে আসা যায়। আজকে ট্রাকে দাঁড়াইয়া আইলাম কষ্টে গাদাগাদি কইরা। ভাড়া নিল ৫ গুণের বেশি ৩৫০ টাকা। আমগো নিয়া প্রতি লকডাউনেই একটা খেলা হয় ভাই। আমরা গরিব মানুষ, আমাগো কথা কেউ শুনে না।’
কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার সাভার এলাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক ছাইদুল শেখ (৩৪)। মাদারীপুরের টেকেরহাটে ছাইদুলের গ্রামের বাড়ি। তিনি জানান, কঠোর বিধিনিষেধের ভেতরে হঠাৎ ১ আগস্ট থেকে কারখানা খুলে দেওয়ায় যেভাবেই হোক তার আজ ঢাকা পৌঁছাতেই হবে। না হলে চাকরি থাকবে না।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (৩১ আগস্ট) বেলা ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে একটু পরপরই দেখা মিলছে ট্রাকের। তবে এসব ট্রাকে নেই কোনো পণ্য। সব মানুষ। ট্রলিতে গাদাগাদি করে করে যারা যাচ্ছেন, তারা প্রায় সবাই তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক। এতে মানা সম্ভব হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এসব শ্রমিকের গন্তব্য গোয়ালন্দ ঘাট। তারপর সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে পাড়ি।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, অটোরিকশা, ভ্যান, সিএনজি অটো, মাহেন্দ্র যে যেভাবে পারছেন, সেভাবেই ছুটে চলছেন। শনিবার অন্যদিনের চেয়ে সড়কে অন্তত কয়েক গুণ বেশি যানবাহন দেখা গেছে। এসব যানবাহন শহরে ঢুকছে না। শহরের প্রবেশপথ মুন্সিরবাজার এলাকা দিয়ে হাতের বামের বাইপাস সড়ক দিয়ে রাজবাড়ী রাস্তার মোড় হয়ে গোয়ালন্দের দিকে যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের পোশাকশ্রমিক পপি আক্তার, জেসমিন বেগম ও চায়না আক্তারের সঙ্গে। তারা জানান, অফিস থেকে তাদের জানানো হয়েছে যেভাবেই হোক তাদের অফিসে যোগ দিতে হবে ১ তারিখেই। এ জন্য তারা যাচ্ছেন। এ ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নাই।
ফরিদপুর মুন্সিরবাজার এলাকার ফারুক মোল্লা বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি আইছিলাম। মনে মনে ভাবছিলামও যে এমন একটা অঘটন ঘটবে। তা-ই ঘটল। ভাঙ্গা থেকে মুন্সিরবাজার পর্যন্ত অটোতে আইলাম ১৭০ টাকা ভাড়া দিয়া। এখন হাইটা হাইটা কোথায় যাইয়া ট্রাক পাব, তা জানি না। সন্ধ্যার আগে ঘাটে যাইতেই হবে।
ফরিদপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউন বলেন আর কঠোর বিধিনিষেধ বলেন, জনগণের সহযোগিতা ছাড়া একা পুলিশের পক্ষে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কিছু যানবাহন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে। তবে সামনে পেলে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, ট্রাকে যাত্রী পরিবহনের বিষয়টি পুলিশের নজরে এলে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। ভাড়া বেশি নেওয়ার বিষয়টি তার জানা ছিল না।
এনএ