বিজয়ের পরিবারের জন্য ১৫ দিনের খাবার দিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান
বগুড়ার কাহালুতে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করা ৯ বছরের শিশু বিজয় হোসেনের পরিবারকে ১৫ দিনের খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আল হাসিবুল হাসান সুরুজ। সোমবার (০২ আগস্ট) বিকেলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি শিশুটির পরিবারের জন্য চাল, ডাল, লবণ, তেল, আলুসহ ১৫ দিনের খাদ্যসামগ্রী প্রদান করেন।
এর আগে সকালে ‘ঘরেত ক্ষিদা, তাই লাল চা বেচি’ শিরোনামে শিশু বিজয় হোসেনকে নিয়ে ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি নজরে আসে কাহালু উপজেলা চেয়ারম্যান আল হাসিবুল হাসান সুরুজের। তিনি ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিশু বিজয় ও তার পরিবারকে খুঁজে বের করেন।
বিজ্ঞাপন
খাদ্যসামগ্রী পেয়ে বিজয় হোসেন জানায়, করোনাকালে তাকে আর ঘর থেকে বের হয়ে লাল চা বেচতে হবে না। এখন সে মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে। সরকারি নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকতে পারবে। মা, বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে থাকতে পারবে।
বিজয় কাহালু মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। বাড়ি কাহালু উপজেলার পৌর এলাকার সাগাটিয়া গ্রামে। তার বাবা দুলাল হোসেন মৌসুমি ফল বিক্রেতা। আর মা আলেফা বেগম গৃহিণী। বিজয়ের বড় ভাই আসিফ আলী ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
বিজ্ঞাপন
বিজয়ের বাবা দুলাল হোসেন বলেন, করোনার কারণে ব্যবসা নেই, তার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ। তাই ছেলেটা চা বিক্রি করতে বের হতো। আমার ইচ্ছে না থাকলেও তাকে দিয়ে কাজ করাতে বাধ্য হয়েছি। ছেলেটা কষ্ট করেছে। ছেলেকে আর চা বিক্রির জন্য পাঠাবো না। উপজেলা চেয়ারম্যান আমাদের ১৫ দিনের খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনি আরও সহায়তার কথা বলেছেন। আমার যত কষ্টই হোক বিজয়কে আর চা বিক্রি করতে হবে না।
কাহালু থিয়েটারের সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সুরুজ ভালো মানুষ। তরুণদের মধ্যে তিনি খুব ভালো কাজ করছেন। বিজয়ের পরিবারের জন্য ১৫ দিনের খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি। তাকে সাধুবাদ জানাই। এভাবে বিজয়ের মত অভাবি পরিবারগুলোর পাশে বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে বিজয়দের মত শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
স্থানীয় সাংবাদিক শাহিন সরদার বলেন, বিজয়ের পরিবারের মত হাজারো পরিবার এখন লোকলজ্জার ভয়ে কোনো সাহায্য চাইতে পারে না। আবার তাদের চুলাতে হাঁড়িও উঠে না। এসব পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে।
কাহালু উপজেলা চেয়ারম্যান আল হাসিবুল হাসান সুরুজ বলেন, আমি যে বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছি বিজয় সেই বিদ্যালয়ে পড়ে। খবরটি পড়ে ব্যথিত হয়েছি। তারপর বিজয় ও তার পরিবারকে খুঁজে বের করি। বিজয় ও তার বাবা ফল বিক্রেতা দুলাল হোসেনকে ডেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৫ দিনের খাদ্যসহায়তা দিয়েছি। তার বাবা কথা দিয়েছে বিজয় আর কখনও চায়ের ফ্লাস্ক হাতে নিয়ে চা বিক্রি করবে না।
তিনি আরও বলেন, বিজয়ের পড়াশোনায় যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে তার জন্য তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। কারণ আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। তারা আগামী দিনের সোনার বাংলা গড়ে তুলবে। তাদের হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
খাদ্যসহায়তা প্রদানকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক আলী কবিরাজ ও ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শাজাহান আলী উপস্থিত ছিলেন।
সাখাওয়াত হোসেন জনি/আরএআর