লাল তীর কোম্পানির বীজ লাগিয়ে কাঁদছেন সাতক্ষীরার কৃষকরা
লাল তীর সীড লিমিটেডের হাজার ৭০ জাতের বরবটি বীজ রোপণ করে বিপাকে পড়েছেন সাতক্ষীরার কৃষকরা। তিন/চার মাস অতিবাহিত হলেও গাছে নেই ফুল ও ফলন। এখন বাধ্য হয়েই সবজি গাছগুলো কেটে ফেলছেন কৃষকরা।
তারা বলছেন, এর দায় কে নেবে? এক মৌসুমের সবজিতে কৃষকরা পথে বসে গেল, মাথায় হাত উঠে গেছে। শ্রম গেছে বৃথা আবার লাখ লাখ টাকা লোকসান। অন্যদিকে, কোম্পানিটির কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এমন কেন হলো এ বিষয়ে গবেষণা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের পরানদাহ বিলের ৩০ জন কৃষকের অবস্থা একই। এসব কৃষক লাল তীর সীড লিমিটেড কোম্পানির বরবটি বীজ রোপন করেছিলেন। তারা জানান, প্রতি কেজি বীজ ক্রয় করতে হয়েছে ১৪০০ টাকায়। এক কেজি বীজ লাগাতে ও ফলন আসা পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে বিঘা প্রতি বরবটি বিক্রি হওয়ার কথা ছিল ৭০ হাজার টাকায়।
বিজ্ঞাপন
পরানদাহ গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে ফিরোজ হোসেন মাছের ঘেরের চারপাশে তিন বিঘা জমিতে চাষ করেছিলেন বরবটি। তবে রোপনের তিন মাস অতিবাহিত হলেও গাছে ফুল ও ফলন কোনোটিই হয়নি।
কৃষক ফিরোজ হোসেন জানান, তিন বিঘা মাছের ঘেরের পাশে লাল তীর বরবটি হাজার ৭০ জাতের বীজ লাগিয়েছি। গত তিন মাসে কোনো ফুল ও ফল আসেনি গাছে। বিলের সব কৃষকের মাথায় এখন হাত উঠে গেছে। এখন এর দায় কে নেবে? পরানদাহ বিলের প্রায় অর্ধশত কৃষকের একই অবস্থা। যারাই এ কোম্পানির বীজ লাগিয়েছেন সবারই একই অবস্থা।
পরানদাহ গ্রামের ইয়াকুব গাজীর ছেলে কৃষক আলামিন হোসেন বলেন, আমার গাছের তিন মাস বয়স। পাঁচ বিঘা জমিতে লাল সীড কোম্পানির হাজার-৭০ জাতের বরবটি বীজ লাগিয়েছি। বীজগুলো সাতক্ষীরা বড়বাজারের মুসলিম বীজ ভাণ্ডার থেকে নেওয়া হয়েছিল। দোকানদার বলেছিলেন, এই বীজ খুব ভালো। অনেকটা জোর করেই দিয়েছিলেন তিনি। তবে ফুল ও ফলন না আসায় দোকানদারকে একাধিকবার বলেছি। তিনি জানিয়েছিলেন, কোম্পানির লোক গিয়ে দেখে আসবে। তবে তারা কেউ আসেননি।
তিনি জানান, নিরুপায় হয়ে জমির গাছগুলো কেটে ফেলতে হয়েছে। এখনো কিছু গাছ রয়েছে সেগুলোও কেটে ফেলছি। কী করবো গাছ রেখে। কৃষকদের দুঃখ দেখার কেউ নেই।
সাতক্ষীরা সদরের লাল তীর সীড লিমিটেড কোম্পানির ডিলার শহরের মুসলিম বীজ ভাণ্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী আক্তারুল ইসলাম জানান, আমি ১৫০ জন কৃষককে এই বীজ দিয়েছিলাম। এসব গাছে ফুল ও ফল আসেনি। আমি কোম্পানির কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা সরেজমিনে এসে দেখবেন ও ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
কোম্পানিটির সাতক্ষীরা জেলার জুনিয়র অফিসার সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার মধ্যে ২৫০ কেজি বীজ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। কতজনকে দেওয়া হয়েছে এমন সংখ্যা জানা নেই। তবে অভিযোগ উঠেছে, বরবটি গাছে ফুল ও ফল ধরছে না। ঘটনাটি সরেজমিন দেখার জন্য বিভাগীয় কর্মকর্তা আসবেন বলে জানিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কি হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, স্যারেরা দেখার পর কি ব্যবস্থা নেয় সেটি তারা বলতে পারবেন।
কৃষকদের এ অভিযোগের বিষয়ে লাল তীর সীড লিমিটেডের (সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনা) বিভাগীয় কর্মকর্তা ফখরুদ্দীন আহম্মেদ সুমন ঢাকা পোস্টকে জানান, আবহাওয়াজনিত কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আমরা গবেষণা করছি এমন কেন হলো।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ি উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, আমরা কৃষককে কোনো কোম্পানির বীজ লাগানোর জন্য পরামর্শ দেই না। কৃষকরা ডিলারদের কাছ থেকে পছন্দমতো কোম্পানির বীজ ক্রয় করে চাষাবাদ করেন। যদি কোনো কোম্পানির বীজ চাষাবাদের পর ফুল ও ফলন না আসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক যদি লিখিত অভিযোগ দেয় সেক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নেব।
এমএএস