নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কিশোরগঞ্জের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের নিখোঁজ ২০ জনের ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল ও মরদেহ এখনো স্বজন বা জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছায়নি। শোকাতুর স্বজনরা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে প্রিয়জনদের মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছেন। এসব শ্রমিকদের বাড়িতে এখনো কান্না থামেনি ।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কিশোরগঞ্জের চার উপজেলার ১৫ গ্রামের ২০ নারী-পুরুষ শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন।

নিখোঁজরা হলেন- সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের রঘুনন্দন গ্রামের মৃত আ. মালেকের মেয়ে মাহমুদা আক্তার (১৭), কর্শাকড়িয়া ইউনিয়নের চিকনীরচর গ্রামের রাজীব মিয়ার স্ত্রী আমেনা খাতুন (৩০), একই ইউনিয়নের জালীয়া গ্রামের মাহতাব উদ্দিনের স্ত্রী শাহানা আক্তার (৩০), একই ইউনিয়নের শেহড়া গ্রামের আ. কাইয়ুমের মেয়ে খাদিজা (১৫), দানাপাটুলী ইউনিয়নের গাগাইল গ্রামের মঞ্জিল ভূঁইয়ার স্ত্রী মিনা খাতুন (২৮), একই ইউনিয়নের কালিয়াকান্দা গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে নাজমুল ইসলাম (১৫), যশোদল ইউনিয়নের ব্রহ্মণকান্দি গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে শাহান (১৫), চৌদ্দশত ইউনিয়নের বড় খালেরপাড় গ্রামের হেলিম মিয়ার স্ত্রী রহিমা (৩০)।

কটিয়াদী উপজেলার সহশ্রাম ধুলদিয়া ইউনিয়নের গৌরীপুর গ্রামের বাচ্চু মিয়ার মেয়ে তাছলিমা আক্তার (১৮), এইকই গ্রামের চান্দু মিয়ার মেয়ে মোছা. রাবিয়া আক্তার (১৯), একই গ্রামের সেলিম মিয়ার মেয়ে মোছা. উমরিতা (২৫), কমিরগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের মাথুরাপাড়া গ্রামের খোকন মিয়ার স্ত্রী জাহানারা (৩৫), একই গ্রামের কাইয়ুম মিয়ার স্ত্রী পাখিমা (৩৭), একই গ্রামের হাতের উদ্দিনের ছেলে নাঈম (১৮), জাফরাবাদ ইউনিয়নের সাইটুটা গ্রামের স্বপন মিয়ার স্ত্রী সাগরিকা (২২), বারঘড়িয়া ইউনিয়নের চাতাল গ্রামের সুরুজ আলীর মেয়ে ফারজানা (১৯), গুনধর ইউনিয়নের বড়হাটি গ্রামের বাবুল মিয়ার স্ত্রী রহিমা (২৫), নোয়ামবাদ ইউনিয়নের মোলামখারচর গ্রামের সুজন মিয়ার মেয়ে ফাতেমা আক্তার (১৫), জাফরাবাদ ইউনিয়নের বাদেশ্রীরামপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মুন্না (১৫) এবং হাওর উপজেলা মিঠামইনের গোপদিঘী ইউনিয়নের গোপদিঘী গ্রামের সেলিম মিয়ার মেয়ে সেলিনা আক্তার (১৪)।

এ ছাড়া ঘটনার পর পর মীনা আক্তার (৩০) নামে করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের কুকিমাধব গ্রামের হারুন অর রশিদের স্ত্রীর মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়। কারখানার ওই ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে এবং আগুনে পুড়ে আহত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন জেলার বিভিন্ন বয়সের ৯ নারী-পুরুষ শ্রমিক।

জেলার সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের ব্রহ্মণকান্দি গ্রামের নিখোঁজ শাহান আক্তারের মা মদিনা খাতুন বিলাপ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মেয়ের লাশ এখনো পাইনি। মেয়ে তো আর পাব না, মেয়ের লাশের অপেক্ষায় এখন বসে আছি। কবে পাব আমার মেয়ের লাশ?

সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের রঘুনন্দন গ্রামের নিখোঁজ মাহমুদা আক্তারের বড় ভাই সুমন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার কয়েক দিন পরই আমার বোনের লাশ শনাক্তের জন্য ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে এসছে। কিন্তু এখনো ছোট বোনের লাশ পাইনি।

সদর উপজেলার দানাপাটুলী ইউনিয়নের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং মানবাধিকার কর্মী এবিএম জালাল উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি মনে করি কারাখানা কর্তৃপক্ষ ও সরকার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াবে। তাহলে ওই অসচ্ছল পরিবারগুলো কিছুটা হলেও একটু স্বস্তি পাবে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, সোমবার (২ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের কোনো তালিকা এখনো আসেনি। ফলাফলের তালিকা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রূপগঞ্জের সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত সাত শিশু শ্রমিকসহ কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন বয়সের ২০ নারী-পুরুষ শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের স্বজনরা যথা সময়ে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনাও দিয়ে এসেছেন।

মোহাম্মদ শামীম আলম আরও জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে পাওয়া নিখোঁজদের তালিকায় জেলার সদর উপজেলার আটজন, করিমগঞ্জ উপজেলার আটজন, কটিয়াদী উপজেলার তিনজন এবং মিঠামইন উপজেলার একজনের নাম রয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার পর পর মীনা আক্তার (৩০) নামে জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার এক নারী শ্রমিকের মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের কুকিমাধব গ্রামের হারুন অর রশিদের স্ত্রী নিহত মিনা আক্তারের (৩৩) পরিবারকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে দুই লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিনজন আহত শ্রমিকের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রূপগঞ্জের কর্ণগোপ এলাকার হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় আগুন লাগে। এতে ৫২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফরের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ূন কবীর বাদী হয়ে কারখানা মালিক আবুল হাসেম ও তার চার ছেলে, প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।

⁠এসপি