বাগেরহাটে সওজের ১৪ বেইলি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ
৫০ বছর আগে চলাচলের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হয়েছিল বেইলি সেতুগুলো। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেই সেতুগুলো এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, বেশির ভাগ সেতুর অবস্থা নাজুক। কোথাও কোথাও স্টিলের পাত ভেঙে পড়েছে, কোথাও আবার মরিচা পড়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে পার হতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই এলাকাবাসী, পথচারী ও যানবাহন চলাচল করছে সেতুগুলো দিয়ে।
বিজ্ঞাপন
বাগেরহাট সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খুলনা-মাওয়া পুরাতন মহাসড়ক ও সাইনবোর্ড-বগী আঞ্চলিক মহাসড়কে ১৪টি বেইলি সেতু রয়েছে। এসব সেতুগুলো প্রায় ৫০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়। এসব বেইলি সেতুর জায়গায় আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই দরপত্র আহ্বান করা হবে।
সেতুগুলোর মধ্যে মোল্লাহাট উপজেলার নাশুখালী বাজার সংলগ্ন সেতু, পাগলার বাজার সেতু, চরকুলিয়া সেতু, হারিদহ সেতু, মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতি সেতু, শরণখোলা উপজেলার নলবুনিয়া সেতু অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব সেতুর সামনে সড়ক বিভাগ কর্তৃক সতর্কবার্তা লিখে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সাইনবোর্ডে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা লেখা থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়তই ভারী-হালকা যানবাহন চলাচল করছে। ফলে মাঝে মাঝেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
বিজ্ঞাপন
চরকুলিয়া ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ ফারুক ও নিমাই বিশ্বাস বলেন, চরকুলিয়া হাট অনেক বড়। এখানে প্রতিদিনই কয়েক হাজার মানুষ বাজার করতে আসে। কিন্তু সেতুটি ভাঙা থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হয়।
চরকুলিয়া সেতুতে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন মো. সোহেল। তিনি বলেন, সেতু দিয়ে সাইকেলে করে যাচ্ছিলাম। একটি পাত ভেঙে নিচে পড়ে যাই। এ সময় আমার পাসহ সাইকেলের চাকা ব্রিজের মধ্যে ঢুকে যায়। এতে আমি মারাত্মকভাবে আহত হই। কয়েকদিন আগে শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি ভ্যানও এভাবে পড়ে যায়। ওই সময় তিনজন ছাত্রী আহত হয়।
স্থানীয় কয়েকজন ভ্যান ও নছিমনচালক বলেন, এই রাস্তা ছাড়া আমাদের বিকল্প রাস্তা নেই। কী করবো? তাই নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মালামাল নিয়ে এই সেতু অতিক্রম করি।
বিপুল নামে এক কিশোর বলেন, কয়েকদিন আগে কই মাছ বহনকারী একটি ভ্যানের চাকা পাতের ফাঁকে ঢুকে উল্টে যায়। এতে ভ্যানের সব কই মাছ নদীতে পড়ে যায়।
এদিকে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে হারিদহ সেতুটি একবার সংস্কার করলেও কিছু দিনের মধ্যে এটি আবার আগের মতো নষ্ট হয়ে যায়।
মোড়েলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতী এলাকার ভ্যানচালক হাফিজুর রহমান বলেন, এই সেতু দিয়ে না পারি ঠিকমতো ভ্যান চালাতে, না পারি অন্যভাবে যেতে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
মোল্লাহাট উপজেলার গাওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, গাওলা ইউনিয়নের মধ্যে সড়ক জনপথের পুরোনো রাস্তার ওপর চারটি বেইলি সেতু রয়েছে। তার প্রত্যেকটিই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করে। ছোটখাট দুর্ঘটনাও ঘটে। সবজিসহ পণ্য পরিবহনেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সেতু পুনর্নির্মাণ অথবা সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
বাগেরহাটের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, খুলনা-মাওয়া পুরাতন মহাসড়ক ও সাইনবোর্ড-বগী আঞ্চলিক মহাসড়কে ১৪টি বেইলি সেতু রয়েছে। এসব সেতুগুলো প্রায় ৫০ বছর আগের নির্মাণ করা। আমরা মাঝে মাঝে সেতুগুলো সংস্কারও করি।
তিনি আরও বলেন, পুরাতন বেইলি সেতুর স্থলে আরসিসি সেতু তৈরির জন্য একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মন্ত্রলায়ের অনুমোদন শেষে দরপত্র আহ্বান করা হবে। দরপত্র আহ্বান শেষে যত দ্রুত সম্ভব আরসিসি সেতু তৈরির জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হবে।
তানজীম আহমেদ/এসপি