রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের করোনার টিকাদান কেন্দ্রে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল টিকাদান কার্যক্রম। পরে পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে টিকা প্রদান শুরু হয়।

টিকাগ্রহণের ক্ষুদেবার্তা ছাড়া কেন্দ্রে আসা লোকজনের অতিরিক্ত ভিড় ও সিটি করপোরেশন এলাকায় একাধিক টিকাকেন্দ্র না থাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি করছে কর্তৃপক্ষ। টিকা নিতে আসা লোকজনের অভিযোগ, কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকাগ্রহণ কষ্টকর।

বুধবার (৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়াতে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টিকা কার্যক্রম থমকে ছিল। এ সময় টিকা নিতে আসা মানুষকে সামলাতে পারেননি পুলিশ ও টিকাদানে সহযোগী স্বেচ্ছাসেবকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিনের মতো বুধবার সকাল নয়টা থেকে টিকাপ্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে করোনার টিকা নিতে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন আসতে থাকেন। টিকাদান কেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে উপেক্ষিত হয় স্বাস্থ্যবিধি। লম্বা লাইন প্রধানফটক ছাড়িয়ে যায়। 

দীর্ঘক্ষণ লাইনে থেকে টিকা নিতে বিলম্ব হওয়াতে শুরু হয় হট্টগোল। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন কেন্দ্রে অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার মানুষের জমায়েত ছিল।

পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী ও নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকেরা অনেক চেষ্টা করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হন। পরে টিকা গ্রহণে ১৫ জুনের পর যারা নিবন্ধন করেছেন, তাদের চলে যেতে ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর প্রধান ফটল খুলে দিলে ১৫ জুন পর্যন্ত করা নিবন্ধনকারীরা ছাড়া বাকিরা চলে যান। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠে।

উদ্ভূত এ পরিস্থিতির কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, টিকা নিতে আসা বেশির ভাগ মানুষ নিবন্ধন করেছেন এপ্রিল, মে ও জুন মাসে। যাদের মুঠোফোনে টিকাগ্রহণের তারিখসহ ক্ষুদেবার্তা পৌঁছেছে। কিন্তু লকডাউন পরিস্থিতি ও অসচেতনতার কারণে নির্দিষ্ট তারিখে টিকা নিতে আসেননি। আবার অনেকেই শুধু নিবন্ধন করেই টিকা নিতে এসেছেন।

এসব মানুষ ছাড়াও ‘১১ আগস্টের পর টিকাছাড়া বাইরে বের হলে শাস্তি পেতে হবে’, এমন সংবাদে কান দেওয়া মানুষেরও ভিড় ছিল টিকাকেন্দ্রে। তবে সবার অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের জন্য রংপুরে একটি মাত্র কেন্দ্র থাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে।

রংপুর নগরের ছোট মন্থনা বিপি রোড এলাকার বাসিন্দা বাবুল আকতার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল পৌনে দশটার দিকে কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। কিন্তু হট্টগোল শুরু হওয়াতে টিকা নিতে পারিনি। পরে কর্তৃপক্ষ ১৫ জুনের নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের চলে যাওয়ার জন্য ঘোষণা দেয়ায় ফিরে এসেছি। বাবুল আকতার ও পরিবারের আরও চার সদস্য গত ৩১ জুলাই নিবন্ধন করেন বলেও জানান।

নগরের শাপলা চত্বর এলাকার হাফিজুর রহমান বলেন, আমি তো ভয়ে এসেছি। শুনেছি টিকা না নিলে নাকি ১১ আগস্ট থেকে জরিমানা করা হবে। এজন্য এনআইডি আর নিবন্ধনপত্র সঙ্গে নিয়ে এসেছি, কিন্তু পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এখানে করোনা ঝুঁকি অনেক বেশি। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।

আয়েশা সিদ্দিকা নামে এক গৃহিণী টিকা গ্রহণ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় ঢাকা পোস্টের সাথে কথা বলেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এত বড় সিটি করপোরেশনে একটি মাত্র টিকাদান কেন্দ্র, এটা দুঃখজনক। যদি ওয়ার্ডভিত্তিক কেন্দ্র বা আরও কিছু টিকাকেন্দ্র থাকত, তাহলে আজকের উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হতো না। 

জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, টিকা নিতে মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এ কারণে প্রতি দিন কেন্দ্রে ভিড় বাড়ছে। টিকা নিতে আসা মানুষদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। প্রতি দিন সেখানে ১ হাজার ৪০০ জনকে টিকা প্রদান করা হয়। টিকাদান কেন্দ্র বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ কামরুজ্জামান ইবনে তাজ বলেন, সম্প্রতি ১ লাখ ১৬ হাজার টিকা এসেছে। কিন্তু একটি মাত্র কেন্দ্রে এভাবে টিকা প্রদান করা সম্ভব নয়। আমরা আরো আটটি টিকাদান কেন্দ্র করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে জানিয়েছি। 

প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে টিকা ছাড়া বের হলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে, এমন সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর