তোর স্বামীর আশা ছেড়ে দে, কোনোদিন দেখতে পাবি না
বগুড়ার ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম হত্যায় পাঁচজন গ্রেপ্তার
ভাই ও চাচার পরিকল্পনায় বগুড়ার ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন ফরিদুলের ছোট ভাই ও চাচাসহ পাঁচজন। ফরিদুলের দাফনসহ সব আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে অংশ নেন তারা। দাফনের পর অপহরণ নাটক সাজানো হয়। সেই নাটকের ফোনকলের সূত্র ধরে ফরিদুল হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ।
৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ইটালি মধ্যপাড়ায় নিজ বাড়ির দরজায় সিমেন্ট ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলামকে (৪৮) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়। সাতদিনের মধ্যে হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন করে পুলিশ। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া ছোট ভাই ও চাচাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় নিজ কার্যালয়ে প্রেস কনফারেন্সে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) আলী আশরাফ ভূঞা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন শেরপুরের হলদিবাড়ি আটাপাড়া গ্রামের মৃত মান্নান মন্ডলের ছেলে মো. ওমর ফারুক (৩৫), একই উপজেলার ইটালি মধ্যপাড়া গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে মাে. ফারুক আহমেদ (৩০), মৃত রসুলের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৫৮), মৃত কেরামত আলীর ছেলে জিয়াউর রহমান জিয়া (৪০) ও তার স্ত্রী শাপলা খাতুন (৩৫)।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, ছোট ভাইয়ের সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত বিরােধ এবং তিন লাখ টাকার লেনদেনকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী ফরিদুলকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া সবাই ফরিদুলের আত্মীয়। ফরিদুল হত্যায় অংশ নেন সৎশ্যালক ওমর ফারুক, ভাতিজা ফারুক আহমেদ, চাচা আব্দুর রাজ্জাক, ছোট ভাই জিয়াউর রহমান জিয়া ও তার স্ত্রী শাপলা খাতুন।
এসপি আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, ফরিদুল ইসলাম ব্যবসার পাশাপাশি কৃষিকাজও করেন। মায়ের জমিজমা নিয়ে ফরিদুলের সঙ্গে ছোট ভাই জিয়ার দ্বন্দ্ব ছিল। ফরিদুলের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ধার নেন ছোট ভাই জিয়া। মূলত তিন লাখ টাকার লেনদেন ও জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে বড় ভাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনায় ছিলেন স্ত্রী শাপলা ও চাচা রাজ্জাকও। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন ওমর ফারুক ও ফারুক আহমেদ। পাঁচজনের অংশগ্রহণে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
তিনি বলেন, প্রযুক্তির সহায়তায় ফরিদুল হত্যার রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হয় পুলিশ। প্রথমে ওমর ফারুককে সন্দেহ হয়। এরই মধ্যে অপহরণের নাটক করে মানিকগঞ্জে লুকিয়ে থাকেন ওমর ফারুক। হঠাৎ ৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় তার স্ত্রীর কাছে কল আসে। স্ত্রী কল রিসিভের পর অপরিচিত কণ্ঠে বলা হয়, তোর স্বামীর আশা ছেড়ে দে, আর কোনোদিন দেখতে পাবি না। এ সময় পাশে থেকে ওমর ফারুক বলেন, হাত-পা ও চোখ বেঁধে আমাকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এরপর ফোনকল কেটে দেওয়া হয়।
সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি পুলিশকে জানান ওমর ফারুকের স্ত্রী। তখন ওমর ফারুককে গােয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়। মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সকালে ওমর ফারুককে মানিকগঞ্জ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন ফরিদুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। তার স্বীকারােক্তির ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ইটালি গ্রামে অভিযান চালিয়ে অপর চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন
আলী আশরাফ ভূঞা, পুলিশ সুপার, বগুড়া
শেরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, আসামিরা ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। ওমর ফারুক ও ফারুক আহমেদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে।
প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী, আব্দুর রশিদ, মোতাহার হোসেন, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক, শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক মো. আবুল কালাম আজাদ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাচ্চু বিশ্বাস।
এএম