সচ্ছলতা ফিরেছে সেই মাহাবুবের সংসারে
‘আমার জামাই এমন অবস্থায় ছিল, দুই-তিনবার গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। এই বাচ্চা খাওন চায়, দুধ চায়। কিন্তু ওর আয় নেই। সেই কষ্টে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। তবে আল্লাহর রহমতে এখন ভালোই আছি। আমার মেয়েজামাই খুব কষ্টে ছিল। আপনারা যা দিয়েছেন, যে সহায়তা করেছেন, তাতে খেয়েপরে খুব ভালো আছি আমরা।’
কথাগুলো বলছিলেন আর্টিস্ট মাহবুব আলমের শাশুড়ি তাসলিমা বেগম। তিনি জানান, অভাবের তাড়নায় ঘরের চুলা ঠিকভাবে জ্বলত না। দোকান বন্ধ, কাজ নেই। করোনায় সব বন্ধ করা ছিল। আমাদের কাছে কোনো উপায় ছিল না। তার ওপর ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, বাচ্চার খাবার, নিজেদের বাজার-সদাই করা অসম্ভব ছিল। তবে আপনাদের মাধ্যমে মানুষের সাহায্য-সহায়তায় ‘সুদিন ফিরছে’।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৭ নং ওয়ার্ড কাউনিয়া ব্রাঞ্চরোড সাবান ফ্যাক্টরি গলির মাহাবুব আলমের ভাড়া বাসায় কথা হয় তাসলিমা বেগমের সঙ্গে। এ সময় তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন। সকাল থেকেই ঘরে ছিলেন না মাহাবুব আলম। দোকান চালু করার জন্য কয়েক দিন ধরেই ব্যস্ততা চলছে তার। বাজার রোডে একটি কাঠের দোকানে সাইনবোর্ডের ফ্রেমের কাজ করছিলেন। মুঠোফোনে কথা হলে অল্পক্ষণেই চলে আসেন বাসায়।
ঘরের দরজা খুলতেই চোখে পড়ল মাহবুব আলমের মেয়ে মুসকান জাহান তাইয়্যেবাকে। মেঝেতে একটি বালিশে শুয়ে মুখে ফিডার গুঁজে দুধ পান করছিল। এরপর দীর্ঘক্ষণ মাহবুবু-ঝুমুর দম্পতির সংসারের হালহকিকত নিয়ে গল্প হয়। সংবাদ প্রকাশের ১৩ দিনের ব্যবধানে সচ্ছলতা ফিরেছে সংসারে, প্রশান্তি এসেছে কাজে।
মাহাবুব বলেন, এখন আমরা ভালো আছি, সুস্থ আছি। আমার যে মর্মাহত অবস্থা ছিল, ঢাকা পোস্টের কারণে আজ আমার সেই অবস্থা থেকে উন্নতি হয়ে ভালো অবস্থায় আসতে পেরেছি। ঢাকা পোস্টকে আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। ঢাকা পোস্ট যা করেছে, সেই ঋণ কোনো দিন শোধ করার মতো নয়। মূলত ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশের পর তা দেখে দেশ, বিদেশ, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন লোকজন আমাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। চাল, ডাল, তেল, বাচ্চার দুধ, নগদ টাকা, যার যা সামর্থ্য ছিল, আমাকে দিয়ে আমাদের পুরো পরিবারকে বাঁচতে সহযোগিতা করেছেন।
বিজ্ঞাপন
মাহাবুব বলেন, আমার দোকানে একটি কম্পিউটারের দরকার ছিল। এর আগে অন্যের কম্পিউটারের সাহায্য নিতে হতো। তারা কম্পিউটারও কিনে দিয়েছেন। আমার ঘরে কোনো খাবার ছিল না। এ জন্য রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম। এখন আমি স্বাভাবিক জীবন যাপন করছি। প্রয়োজনের যা দরকার, তা আপতত সবই পেয়েছি।
তিনি বলেন, করোনাকালে লকডাউনের কারণে যে অভাবে ছিলাম, তাতে আমার পুরো পরিবারসহ আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় ছিল না। তখন না পারছিলাম সংসার চালাতে, না পারছিলাম বাচ্চাকে দুধ কিনে দিতে। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে নেমেছিলাম। রিকশা চালিয়ে দিনে যে মজুরি আসত, তাতে সংসার চালানোর সাধ্য ছিল না। ভাই ও বোনেরা যারা সাহায্য করেছেন, তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। আমার মতো এমন করুণ পরিণতি যেন আর কারও না হয়, সেই দোয়া করি।
তার স্ত্রী ঝুমুর হাওলাদার বলেন, আমরা আগের থেকে ভালো অবস্থায় আছি। যারা সাহায্য-সহায়তা করেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। তিনি বলেন, আমরা তো ভাড়া বাসায় থাকি, যদি আশ্রয়ণের একটি সরকারি ঘর পেতাম, তাহলে জীবনে আর কোনো দুঃখ থাকত না।
প্রসঙ্গত, ২৯ জুলাই (বৃহস্পতিবার) অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডটকম ঢাকা পোস্টে ‘মেয়ের জন্য দুধ কিনতে আর্টিস্ট বাবা রাস্তায়’ শিরোনামে ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর পাঠকরা অর্থসহায়তা প্রদান শুরু করেন। সহায়তা আসে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে, সরকারি-বেসরকারি দফতর থেকে। আর সেই সহায়তায় আর্থিকভাবে সচ্ছলতা ফেরে মাহাবুব আলমের সংসারে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এনএ