পাবনায় সিরিঞ্জে টিকা না নিয়ে এক মেডিকেল শিক্ষার্থীর শরীরে সুঁই পুশের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) তদন্ত কমিটির প্রধান আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান সিভিল সার্জনের দফতরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে কী উল্লেখ রয়েছে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন ডা. রফিকুল হাসান। 

তিনি বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে আমরা তদন্ত সম্পন্ন করতে না পেরে আরও চারদিন বাড়িয়ে সাতদিন সময় নিই। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন  সিভিল সার্জনের দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। আমাদের এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। 

এর আগে গত বুধবার (০৪ আগস্ট) সকালে ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতাল টিকাদান কেন্দ্রে সিরিঞ্জে করোনার টিকা না দিয়েই এক মেডিকেল শিক্ষার্থীর শরীরে শুধু সুঁই পুশের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন ও টিকাকেন্দ্রে দায়িত্বরত দুই সিনিয়র নার্সকে প্রত্যাহার করা হয়। একই সঙ্গে ওই তদন্ত কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেয় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। পরে তদন্ত কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে আরও চারদিন সময় বাড়ানো হয়। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিভিল সার্জনের দফতরে ঘটনার দিন উপস্থিত দুই সিনিয়র নার্স ও রেড ক্রিসেন্টের তিন সদস্যকে নিয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে নার্সরা তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন। আর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তিন সদস্য কাগজপত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বলে তারা ঘটনার কিছুই দেখেননি এমনটি জানান। 

ভুক্তভোগী মেডিকেল শিক্ষার্থীর বাবা অ্যাডভোকেট আব্দুল হান্নান বলেন, আমার মেয়ের সঙ্গে টিকা নিয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি জানানোর উদ্দেশ্য হলো জনসচেতনতা। এখন সবাই টিকা নিতে গিয়ে আগে দেখে নিচ্ছেন। এটা আমার এক ধরনের প্রাপ্তি। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্বে অবহেলার জন্য দুই নার্সকে প্রত্যাহারও করেছে। তদন্ত কমিটি আমাকে ডেকেছিল। আমি আমার বক্তব্য দিয়ে এসেছি।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. কেএম আবু জাফর বলেন, বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখভাল করছেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। কোনো কিছু জানার থাকলে সিভিল সার্জন মহোদয়ের কাছ থেকে জানতে হবে। 

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সাত কার্যদিবস শেষ হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন এখনও তিনি পাননি। 

তবে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে- এমনটি জানালে সিভিল সার্জন বলেন, আমি ছুটিতে আছি। শুনেছি আমার টেবিলে প্রতিবেদনটি এসেছে। আমি ছাড়া ওটা অন্য কেউ খুলতে পারবে না। ছুটি শেষে ১৬ আগস্ট অফিস করার পর এ বিষয়ে আপনাদের জানাতে পারব।

উল্লেখ্য, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের এমবিবিএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাবাহ মারিয়ম অন্তিকা করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার জন্য গত বুধবার (০৪ আগস্ট) সকালে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে গিয়ে লাইনে দাঁড়ান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে টিকা ছাড়াই তার শরীরে সুঁই পুশ করা হয় বলে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থীর বাবা অ্যাডভোকেট আব্দুল হান্নান। 

রাকিব হাসনাত/আরএআর