শীতের চেয়ে গ্রীষ্মকালে শিম চাষে লাভ ৫ গুণ
শুধু শীতকাল নয়, গ্রীষ্মকালেও শিম চাষ হচ্ছে। আর এ গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন ঝিনাইদহ সদর, হরিণাকুন্ডু ও কালীগঞ্জের কৃষকেরা। উচ্চ ফলনশীল হাবিল, ইফসা জাতের শিম চাষে বীজ, সার ও রক্ষণাবেক্ষণে তদারকি করছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ মূল্যের ফসলের মধ্যে শিমের বাজার মূল্য ভালো। এ কারণে কৃষকদের শিম চাষে আগ্রহ বাড়ছে। বর্তমানে জেলার সদর উপজেলা, হরিণাকুন্ডু ও কালীগঞ্জে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা দরে।
বিজ্ঞাপন
শিমের বীজ সাধারণত জুন মাসে (জৈষ্ঠ-আষাঢ়) রোপণ করতে হয়। এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। ফলন পাওয়া যায় বিঘা প্রতি ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকার। আর শীতকালীন শিম চাষে বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। সে সময় শিমের উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে দাম কমে বিঘা প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার ফলন পাওয়া যায়।
জানা যায়, জেলায় মোট আবাদযোগ্য ফসলি জমি রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৫ হেক্টর। এর মধ্যে গ্রীষ্ম মৌসুমে পাটের আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে, আমন ধানের আবাদ হয়েছে ৯২ হাজার ৬৭১ হেক্টরে, মরিচের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৬২৫ হেক্টরে, সবজি চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৪৮৫ হেক্টরে, শিম চাষ হয়েছে ২৮০ হেক্টরে এবং পান চাষ হয়েছে ২ হাজার ২০৩ হেক্টরে। এর মধ্যে গ্রীষ্মকালীন শিম ও সবজি চাষ হয়েছে জেলার সদর, হরিণাকুন্ডু, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাপাশাটিয়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া গ্রামে শিমচাষি আব্দুল খালেকের শিম খেতে দেখা যায়, আব্দুল খালেক শিম খেত পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর গ্রীষ্মকালীন হাবিল ও রূপভান (ইফসা) জাতের শিম চাষ করেছিলেন ২৫ শতক জমিতে। খরচ বাদে লাভ হয়েছিল ৩৫ হাজার টাকা। এ বছরও ৪০ শতক জমিতে শিম চাষ করেছি। কীটনাশক ও কৃষি শ্রমিক ও মাচা খরচ বাবদ ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে বাজারে ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ হবে।
একই গ্রামের শিমচাষি মো. মানোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর ১০ শতক জমিতে হাবিল শিম চাষ করেছিলেন। ১০ হাজার টাকা খরচ করে ৩০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছলিাম। এ বছরও শিম চাষ করেছি।
কালীগঞ্জ উপজেলার সুবিতপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিম সাধারণত শীতকালীন সবজি। এর আগে বর্ষাকালে চাষ হতো না। কিন্তু ভিন্ন জাতের হাবিল, রূপভান (ইফসা) জাতের শিম বারো মাস চাষ করা যায়। শ্রাবণ মাসের প্রথম দিকে শিমের বীজ বপণ করতে হয়। পরবর্তীতে চারা গজানোর ২৫-৩০ দিনের মাথায় ফুল আসে। এরপর দেড় মাস পর থেকেই শিম তোলা শুরু হয়। একটানা ছয় মাস পর্যন্ত খেত থেকে শিম উঠানো যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আজগর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিম, টমেটো, বাঁধাকপি ইত্যাদি মূলত শীতকালে চাষ করা হয়। বর্তমানে কৃষি বিভাগের সাফল্যের কারণে বাজারে বারো মাস সবজি পাওয়া যাচ্ছে। তবে গ্রীষ্মকালে সবজি চাষ করলে ভালো দাম পাওয়া যায়। জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ২৮০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন ইফসা (হাবিল, রূপভান আঞ্চলিক নাম) জাতের শিম চাষ হয়েছে। বাজারে যার বর্তমান মূল্য প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা করে। এতে কৃষকরা ভালো লাভবান হচ্ছে। গত বছর গ্রীষ্মকালে সবজি চাষে সুফল পাওয়ায় এ বছর কৃষকরা আরো বেশি আগ্রহী হয়েছেন।
এসপি