জন্ম থেকেই অন্ধ মো. নুর নবী (২৫)। সংসারে রয়েছে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও চার বছরের কন্যা নাদিয়া। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে নুর নবী কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। তাই পুরো সংসারের দায় দায়িত্ব বৃদ্ধ বাবা লুৎফর মিয়ার (৭০) কাঁধে। তিনি পেশায় একজন কৃষক।

জীবনযুদ্ধের গল্প জানতে চাইলে নূর নবী ঢাকা পোস্টকে জানান, তিনি জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এজন্য তিনি নিজেকে সবসময় অসহায় মনে করেন। এদিকে অন্ধ হওয়ার কারণে তিনি আয় রোজগার করতে পারেন না। তাই বৃদ্ধ বয়সে বাবাকে খাটতে হয়। যা নূর নবীর মনে কষ্ট দেয়।

নূর নবী আরও জানান, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও তার ভেতরে আল্লাহ দিয়েছেন অদম্য কিছু শক্তি। যার মধ্যে রয়েছে না দেখে আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে পথ চলা এবং সুন্দর গানের গলা।

নূর নবী শ্রীবরদী উপজেলার ভায়াডাঙ্গা প্রতিবন্ধী স্কুলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বর্তমানে এই অল্প শিক্ষাকেই কাজে লাগিয়ে মাঝেমধ্যে দু-এক পয়সা আয় করেন তিনি। নূর নবী এখন এলাকার মাইকিংয়ের কাজ করেন।

চোখে দেখেন না তাহলে প্রচারের সময় কীভাবে লেখা দেখেন? প্রশ্নের উত্তরে নূর নবী বলেন, কেউ যদি মাইকে প্রচারের জন্য লেখাটি দু-একবার পড়েন। সেটাকেই আমি সঙ্গে সঙ্গে মুখস্থ করে ফেলি। এজন্য মৃত্যু সংবাদের জন্য ৩০০ টাকা, ডাক্তার বসবেন এজন্য ৫০০ টাকা এবং নির্বাচনী প্রচার করলে প্রতিদিন ১০০০ করে টাকা পাই।

নূর নবী বলেন, তার গানের গলাও মোটামুটি ভালো। মাঝেমধ্যে কষ্ট পেলে নিজেই গান তৈরি করে সুর করি। আবার সেই গান স্থানীয় কাকিলাকুড়া বাজারে গাই। গান শোনেও অনেকে তাকে বকশিস দেয়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে নূর নবী বলেন, জন্ম থেকেই আমি অন্ধ। যদি গান করেও টাকা আয় করতে পারতাম। তাহলে বৃদ্ধ মা বাবাকে কষ্ট করতে দিতাম না। স্বপ্ন দেখি একদিন বড় শিল্পী হব। ইউটিউবে সবাই আমার গান শুনবে।

নূর নবীর বাবা লুৎফর মিয়া (৭০) বলেন, ছেলেটাকে নিয়ে অনেক চিন্তা হয় আমাদের। আমরা মরে গেলে কী হবে তার? আবার অনেক সময় ভাবী, যিনি সৃষ্টি করেছেন, সেই ভাববেন। নূর নবীর জন্য এলাকার চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। 

নূর নবীর মা রাহেলা খাতুন (৬০) জানান, তার ছেলে অনেক সহজ সরল। তাই অনেকে তাকে উপহাস করে। বাজারে গেলে অনেক দুষ্ট ছেলেরা তাকে কানা অন্ধ বলে কটূক্তি করে। তখন নূর নবী বাসায় এসে কান্না করে। বড় দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। যদি মরার আগে তার একটা ব্যবস্থা দেখে মরতে পারতাম তবে শান্তি পেতাম।

স্থানীয় এলাকাবাসী রুবেল মিয়া (২৬) বলেন, আমাদের সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই। কারণ আমরা নিম্নমধ্যবিত্ত। না হলে নূর নবীর জন্য কোনো-না-কোনো ব্যবস্থা করতাম। নূর নবীর জন্য যতটা না খারাপ লাগে। তার জন্য বেশি খারাপ লাগে তার বৃদ্ধ মা-বাবার জন্য।

৩ নম্বর কাকিলাকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান হামিদুল্লাহ তালুকদারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার বিপক্ষে করা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন নূর নবী সমাজসেবা থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। এছাড়াও আমার কাছে কোনো অনুদান এলে আমি তার বাবাকে জানাই।

জাহিদুল খান সৌরভ/এমএসআর