পরীমণি ষড়যন্ত্রের শিকার, তার মুক্তি চাই
মাদক মামলায় গ্রেফতার পরীমণি ইস্যুতে দেশজুড়ে এখনো চলছে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা। তবে ঢাকায় র্যাবের হাতে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ আটকের পর পরীমণির স্বজনরা বলছেন, এটি একটি নতুন ষড়ষন্ত্র। তাকে ফাঁসাতেই তার বিরুদ্ধে শত্রপক্ষ উঠেপড়ে লেগেছে।
সরেজমিনে পিরোজপুরে ভান্ডারিয়া উপজেলার ইকরি ইউনিয়নের সিংহখালী গ্রামে কথা হয় পরীমণির ছোট খালা তাসলিমা বেগম ও খালু জসিম উদ্দিসহ স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে। তাদের দাবি, পরীমণির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন এতে জড়িত।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরীমণির খালা তাসলিমা বেগম জানান, ঢাকায় যাদের সঙ্গে স্মৃতির সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তাদের সঙ্গে তার টাকার সম্পর্ক। তারা কেউই এখন চাইবে না তার ভালো হোক। তাই আমি মনে করি, ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ তার আশপাশে যারা ছিল, তারাই এখন ষড়যন্ত্র করে স্মৃতিকে ফাঁসিয়েছে। এখন এই সুযোগে নাসির উদ্দিন মামলা করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আমরা তার মুক্তি চাই।
পরীমণির বাবা মনিরুল ইসলামের বাড়ি নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার সালাবাদ ইউনিয়নের বাকা গ্রামে। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ভগীরথপুর পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন তিনি। পার্শ্ববর্তী সিংহখালী গ্রামের বাসিন্দা সামছুল হক গাজীর বড় মেয়ে সালমা সুলতানাকে (পরীমণির মা) বিয়ে করেন তিনি। পরীমণির বাবা-মা দুজনই মারা যাওয়ার পর নানার বাড়িতেই থেকে যান তিনি।
বিজ্ঞাপন
পরীর চাচাতো খালা নুরজাহান বেগম বলেন, আমার চাচাতো বোনের মেয়ে স্মৃতি। তার নানি ছিলেন প্রধান শিক্ষক। তার বংশের সবাই ছিলেন শিক্ষক। এখন সে ঢাকায় গিয়ে কী করে। আমরা জানি না। আমরা তার খারাপটা দেখিনি কখনো। তবে যেখানেই যাই, সবাই তার নামে খারাপ বলছে।
আরেক প্রতিবেশী রহমত মিয়া বলেন, সে এখানে লেখাপড়া করে মানুষ হইছে। প্রাইমারিতে বৃত্তি পেয়ে ভগীরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে। তারপর ভান্ডারিয়া থেকে চলে যায়। আমরা জানি তার মদ-গাঁজা খাওয়ার মতো কোনো রেকর্ড নেই। এটা নতুন কোনো ষড়যন্ত্র হতে পারে।
আব্দুর রহিম নামের আরেক প্রতিবেশী বলেন, মেয়েটা (পরীমণি) ভান্ডারিয়া থেকে এসএসসি পাস করার পর ঢাকায় গিয়ে যোগ দেয় অভিনয়জগতে। চোখে যেটা দেখিনাই, সেটা কীভাবে বলব। তবে র্যাব যেভাবে তাকে ধরেছে, তাতে মনে হয় কোনো অবৈধ কাজ করেছে বলেই ধরেছে। তবে সে যেন আর কোনো অপরাধে লিপ্ত না হয়, সেটা আমাদের অনুরোধ।
পিরোজপুর জেলায় ভান্ডারিয়া উপজেলার ইকরি ইউনিয়নের সিংহখালী গ্রামে ১৯৯২ সালের ২৪ অক্টোবর নানার বাড়িতে জন্ম নেন শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণি। জন্মের পর তিনি নানার বাড়িতেই বেড়ে ওঠেন। তিন বছর বয়সে মাকে হারানো পরীমণি হাইস্কুলের গণ্ডি না পেরোতেই হারান বাবাকে।
দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া পরীমণি ভগীরথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। তারপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজ ভর্তি হয়ে আর পড়াশোনা নিয়মিত করেননি।
এদিকে এসএসসি পাসের আগেই ২০১০ সালের দিকে পরীমণিকে তার নানা শামসুল হক গাজী পাশের উপজেলা মঠবাড়িয়ার ছোটশৌলা গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে ইসমাইলের সঙ্গে বিয়ে দেন। কিন্তু সে বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। যৌতুকের কারণে দুই বছর পরই ইসমাইলের বিচ্ছেদ হয় তার।
তারপর একদিন পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। সেখানে পা রাখেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। কাজ শুরু করেন চলচ্চিত্রশিল্পে। ২০১৫ সালে ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। তারপরে কয়েকটি ছবিতে কাজ করার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এখানেই তিনি পান ‘পরীমণি’ নামে অধিক পরিচিতি। হয়ে ওঠেন একজন বাংলাদেশি মডেল ও অভিনেত্রী।
এনএ