দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে পৌরসভার বর্জ্য, দুর্ভোগে এলাকাবাসী
রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের শ্রীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের কাছে বর্জ্য ফেলে আসছে রাজবাড়ী পৌরসভা। এতে প্রতিনিয়ত পথচারী, যাত্রী ও স্থানীয়দের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও পৌর কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন এ মহাসড়ক দিয়ে ১০ জেলার মানুষ যাতায়াত করে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা হাজারো যানবাহন এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে। রাজবাড়ী শহরে কাউকে ঢুকতে হলে এ মহাসড়ক দিয়েই ঢুকতে হয়। বলতে গেলে এটা রাজবাড়ী শহরে ঢোকার প্রবেশপথ। অথচ রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রবেশমুখে এমন আবর্জনার ভাগাড় অন্য জেলার বাসিন্দাদের নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে শ্রীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকার কাজী ফিলিং স্টেশনের পাশে দেখা যায়, মহাসড়কের এক পাশের ফুটপাত দখল করে আছে ময়লার স্তূপ। আবর্জনার স্তূপের ঠিক ৫০-৬০ গজ দূরেই রয়েছে মসজিদ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি। তাদেরও সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেখা যায়, সম্ভু নাথ ও স্বাপন সাহা পৌরসভার ময়লার ভ্যানে বিভিন্ন জায়গা থেকে ময়লা এনে সেখানে ফেলছে। এ সময় কথা হয় তাদের দুজনের সঙ্গে। আলাপকালে তারা জানান, প্রতিদিন রাজবাড়ী পৌরসভার ১৫-২০টি ভ্যান ও একটি ট্রাকে করে ৯টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, বাজার, হাসপাতাল, ক্লিনিকের বর্জ্য এখানে এনে ফেলা হয়। ওইসব বর্জ্য একটু বৃষ্টি হলেই মহাসড়কসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। এতে পরিবেশ দূষণ, পথচারীসহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৯১৩ সালে রাজবাড়ী পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। পৌরসভার ১১ দশমিক ৬৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৫৫ হাজার ৭৮২ জন মানুষের বসবাস। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের বর্জ্য এক সময় যত্রতত্র ফেলা হতো। পরে ৬ নং ওয়ার্ডের শ্রীপুর এলাকায় বর্জ্য ফেলানোর জন্য পাঁচ একর জমি ক্রয় করা হয়। তারপর থেকে ওই এলাকাতেই পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।
শ্রীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পাশের চায়ের দোকানদার আবুল হোসেন। তিনি বলেন, বর্জ্যের পচা দুর্গন্ধে দোকানে বসে থাকা যায় না। এই দুর্গন্ধে কেউ দোকানে এসে বসতে চাই না। না বসলে বেচাকেনা হবে কী করে?
স্থানীয় বাসিন্দা শামসুন্নাহার বলেন, রাজবাড়ীর সব বর্জ্য এখানে ফেলা হয়। আমার বাড়ি পাশে হওয়ায় দুর্গন্ধে থাকতে কষ্ট হয়। দুর্গন্ধের কারণে বাড়ির দরজা-জানালা পর্যন্ত বন্ধ রাখি। তাতেও কাজ হয় না। দুর্গন্ধে আমার শ্বাসকষ্টসহ এলার্জিজনিত সমস্যা হয়েছে। পৌরসভায় গিয়ে অনেক দিন আগে জানিয়েছি। এখনো তারা কোনো ব্যবস্থা নেইনি।
দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে আমাকে যাতায়াত করতে হয়। অসহ্য দুর্গন্ধে চলাচল করতে মন চায় না।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) রাজবাড়ী শাখার সভাপতি প্রফেসর শংকর চন্দ্র সিনহা বলেন, শহরের প্রবেশমুখে এমন ময়লার ভাগাড় রাজবাড়ীর সৌন্দর্য সম্পর্কে পার্শ্ববর্তী অনান্য জেলার বাসিন্দাদের নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। তাছাড়া শহরের মধ্যে এমন ময়লার স্তূপ থাকায় আশেপাশের মানুষের চলাচলের অসুবিধা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই রকম আবর্জনার স্তূপ শহরের বাইরে থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের রাজবাড়ীর ক্ষেত্রে সেটা বিপরীত। শহরের প্রবেশপথে এই বর্জ্যে শহরের সৌন্দর্যটাকেই নষ্ট করে দিয়েছে। এ ছাড়া বর্জ্যের দুর্গন্ধে পরিবেশেরও বিপর্যয় ঘটছে। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে এভাবে সড়কঘেঁষে বর্জ্য ফেলার নজির নেই। হাজার কোটি টাকা খরচ করে জনদুর্ভোগ লাঘবে সরকার সড়কের উন্নয়ন করলেও বর্জ্যের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম এ হান্নান বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এর সংস্পর্শে বা এর ধোঁয়ার প্রভাবে জনসাধারণের চর্ম রোগ, শ্বাসকষ্টসহ স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র আলমগীর শেখ তিতু ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি রাজবাড়ী পৌর এলাকার বর্জ্য অপসারণ করার নির্দিষ্ট স্থান। পৌরসভার নিজস্ব ক্রয় করা জমি। এটাও ঠিক, এখানে বর্জ্যা ফেললে পথচারীসহ আশপাশের মানুষের অসুবিধা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের একটা প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার হয়ে কাজ শুরু হয়ে গেছে। কাজ সম্পন্ন হলে এই সমস্যার সমাধান হবে। ময়লার ফেলার পর তা ভেকু মেশিন দিয়ে সরিয়ে ফেলা হয়। বর্ষা মৌসুমে ময়লার গাড়ি বেশি দূর যেতে পারে না। অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হবে।
এসপি