মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে গর্বিত, রণাঙ্গন অরক্ষণে ব্যথিত
মহান মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ চাচৈর রণাঙ্গন
‘সেই চাচৈর রণাঙ্গনটি এখনো ক্ষতবিক্ষত মানুষের যেমন বেদনা, তা নিয়েই ওই অবস্থাতেই আছে। এখন পর্যন্ত এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়নি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এমনটা মেনে নিতে পারি না আমি। ঝালকাঠির চাচৈর রণাঙ্গন নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ঝালকাঠি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল সাহা।
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ঝালকাঠির ইতিহাস নামক গ্রন্থসহ সব সূত্র অনুযায়ী, মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝালকাঠি জেলার চাচৈর নামক স্থানে সবচেয়ে ভয়াবহ সম্মুখযুদ্ধটি সংঘটিত হয় ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর। বর্তমান ঝালকাঠি সদর উপজেলার ১০ নম্বর নথুল্লাবাদ ইউনিয়নের চাচৈর রণাঙ্গন থেকে পার্শ্ববর্তী নলছিটি উপজেলার প্রেমহার ও ষাটপাকিয়া পর্যন্ত সেদিন অনেককে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদাররা।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গানপাউডার দিয়ে কয়েকটি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় তারা। সম্মুখযুদ্ধে শহিদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়াল। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলমান যুদ্ধে সেদিন হানাদাররা সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়। সেদিনের পর ঝালকাঠি শত্রুমুক্ত হওয়া পর্যন্ত হানাদাররা আর ক্যাম্পের বাইরে কোনো অভিযানে বের হয়নি।
রণাঙ্গন লাগোয়া শরীফ বাড়ি সেদিন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঢাকায় শহিদ হওয়া চাচৈরের শহিদ মোস্তফা কামালের ভাই মনির হেসেন বলেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধা বা শহিদদের স্বীকৃতির দরকার নেই, শহিদ পরিবারের কেউ হওয়ারও দরকার নেই, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিক এ দেশ। তিনি আরও বলেন, রণাঙ্গনের সঙ্গে যে স্কুলটি আছে, সেটি ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত, রণাঙ্গনকে কেন্দ্র করে নয়। দর্শনার্থীরা সহজে জায়গাটি দেখতে আসবে, সে রকম যোগাযোগব্যবস্থাও নেই।
বিজ্ঞাপন
আমরা শিগগির মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আগের মতো ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি সরকারকে ও সংসদ সদস্যকে জানাব। রণাঙ্গন ও বধ্যভূমিগুলো রক্ষায় যাতে আগের চেয়েও যত্নবান হয় সংশ্লিষ্ট মহল, সে বিষয়ে অনুরোধ করব।
সাবেক ডেপুটি কমান্ডার দুলাল সাহা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ইমাম পাশা, মনোয়ার হোসেন খান ও মকবুল হোসেন তালুকদার
সরেজমিন দেখা যায়, ষাটপাকিয়া বাজারের একটু পর থেকেই ভাঙা রাস্তা। আর কিছুদূর গিয়েই প্রেমহার থেকে চাচৈর পর্যন্ত যোগাযোগের যে একমাত্র সড়কটি এবং যে সড়কের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত শহিদদের স্মৃতি মাখা তার অবস্থা খুবই শোচনীয়।
তবে অনেকগুলো পুল, কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু ২০১৬ সালে রণাঙ্গনে একটি স্মৃতিফলক উদ্বোধন করেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রণাঙ্গনের সমক্ষে খালে একটি ঘাটলা নির্মাণ করে দেন।
বিলুপ্ত হওয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার দুলাল সাহা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ইমাম পাশা, যাচাই-বাছাই কমিটির জেলা প্রশাসক প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন খান ও সদর উপজেলার ৬ নম্বর বাসন্ডা ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন তালুকদার সহমত পোষণ করে বলেছেন, আমরা শিগগির মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আগের মতো ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি সরকারকে ও সংসদ সদস্যকে জানাব। রণাঙ্গন ও বধ্যভূমিগুলো রক্ষায় যাতে আগের চেয়েও যত্নবান হয় সংশ্লিষ্ট মহল, সে বিষয়ে অনুরোধ করব।
এনএ