কাজিরহাট-আরিচা পারাপারের অপেক্ষায় শত শত যানবাহন
পাবনার কাজিরহাট থেকে আরিচাঘাট নৌরুটে তিনটি ফেরি চলাচল করলেও পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে শত শত যানবাহন। এই নৌরুটে চারটি ফেরি থাকলেও আকস্মিকভাবে দুটি ফেরি নিয়ে যাওয়া হয় শিমুলিয়া ঘাটে। পরে মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) ফেরি বহরে একটি ফেরি সংযুক্ত করা হয়। তবু যানবাহনের দীর্ঘ লাইন আর মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন তুলে নেওয়ার পর পরিবহনের পাশাপাশি মানুষের বাড়তি চাপ দেখা দিয়েছে। কাজিরহাট ঘাট থেকে আরিচা পার হতে যানবাহনগুলোকে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তিন শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, লকডাউন তুলে নেওয়ার পর থেকে বাড়তি চাপের মধ্যেই এই রুট থেকে দুটি ফেরি নিয়ে যাওয়া হয়েছে শিমুলিয়া ঘাটে। এই রুটের দুর্ভোগের বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসার পরপরই কর্তৃপক্ষ একটি ফেরি বহরে যুক্ত করে দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, আরও কয়েকটি ফেরি সংযুক্ত করা গেলে অবশ্যই এই যানজট অনেকাংশে কমে আসবে।
বিজ্ঞাপন
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, ১৩ আগস্ট ভোরে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজিরহাট ঘাট থেকে সুফিয়া কামাল ও বেগম রোকেয়া নামের দুটি ফেরি শিমুলিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ নিয়ে যায়। এরপর গোলাম মওলা ও কপতি নামের দুটি ফেরি চলাচল করছিল। মঙ্গলবার বিকেলে কলমিলতা নামে একটি ফেরি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ফেরিতে উঠতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। অনেকে গাড়ির মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সময়মতো পণ্য ডেলিভারি দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন পরিবহনচালকরা। এতে উৎকণ্ঠায় রয়েছে ব্যবসায়ী মহল। যানজটের কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও চরম বিব্রতকর অবস্থায় আছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী উজ্জল হোসেন জানান, সকালে ঘাট থেকে কমপক্ষে আড়াই কিলোমিটারজুড়ে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে যানবাহন নদী পারাপারের অপেক্ষায়। কেউ কেউ এক দিন অতিবাহিত করলেও ফেরিতে উঠতে পারেননি। নতুন করে ঘাটটি চালু করা হলেও সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এ অঞ্চলের মানুষ।
কাঁচামাল ব্যবসায়ী ওমর আলী বলেন, সড়কপথে অতিরিক্ত যানজটের কারণে দ্রুত যাওয়ার জন্য ফেরি পারাপার হয়ে ঢাকার সাভারে কাঁচামালের আড়তে ট্রাকে করে শাকসবজি নিয়ে রওনা দিয়েছি। কিন্তু এখানকার চিত্রও একই। কখন যে ঢাকায় পৌঁছাতে পারব, এটা নিয়ে টেনশনে আছি। শাকসবজি নিয়ে বিপদেই আছি। সবজিগুলো পচে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমন শঙ্কায় সময় কাটছে তার।
ট্রাকচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, এই ঘাটে আগেও বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়েছি। ঘাটের অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ এই চালক বলেন, তিন ঘণ্টার রাস্তার জন্য এখন আমাকে প্রায় দেড় দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল হাশেম উজ্জ্বল বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানজট কমানোর জন্যই মূলত এখানে ফেরিঘাট স্থাপন করা হয়েছে। শুরুর দিকে নতুন ফেরি দিলেও বর্তমানে পুরাতন ফেরি দিয়ে চলছে এই ঘাট। ফেরি বাড়ানোসহ এই রুটে নতুন ফেরি সংযোজনের দাবি জানান তিনি।
কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহাবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউন শিথিলের পর এই রুটে যানজটের দেখা মেলেনি। পরিবহনগুলো অনায়াসে পারাপার হয়েছে। হঠাৎ করে দুটি ফেরি নিয়ে যাওয়ায় এমন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছিল। চরম বেকায়দায় সময় পার করছি। আরও একটি ফেরি সংযুক্ত করায় আগামীকাল বুধবার থেকে আর যানজটের সৃষ্টি হবে না বলে জানান তিনি।
রাকিব হাসনাত/এনএ