জুড়াইল গ্রামে হাওলীবাড়ির হুসাইন মোকামে আশুরা পালন

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের জুড়াইল গ্রাম। এ গ্রামে ৩০০ বছর ধরে যথাযথ মর্যাদার মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে আসছে পবিত্র আশুরা। পূর্বপুরুষদের আশুরা পালনের এ রীতি বর্তমানে জুড়াইল গ্রামের হাওলীবাড়ির মুজাহাদুল ফকির ও সাজ্জাদুল ফকিরের পরিবার অব্যাহত রেখেছে।

হাওলীবাড়ির ‘হুসাইন মোকাম’ প্রাঙ্গণে প্রতি বছর মহররমের প্রথম দিন থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আশুরা পালনের আয়োজন করা হয়। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার সীমিত পরিসরে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

এ বছর মহররমের প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া আশুরা পালনের এসব কর্মসূচি শুক্রবার (২০ আগস্ট) রাতে তাজিয়া মিছিল ও মাতম জারির মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে। এছাড়া দশ দিনব্যাপী অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে প্রতি দিনই ছিল মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও মাতম জারি।

সাজ্জাদুল ফকিরের তত্ত্বাবধানে পালিত হচ্ছে আশুরা

স্থানীয় বাসিন্দা ওমর ফারুক ছোটন জানান, এখানে একসময় দশদিন ধরেই মাতম চলত। দূর-দূরান্ত এলাকা থেকেও হাজার হাজার লোকজন ছুটে আসতেন তা দেখার জন্য। কিন্তু এখন আর আগের মতো হয় না। পূর্বপুরুষদের আশুরা পালনের এ রীতি আজও অব্যাহত রেখেছেন পরিবারের লোকজন।

জুড়াইল গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুস সালাম ফকির ও নজরুল ফকিরের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে বিরামদি ফকির নামে এক ব্যক্তি জুড়াইল গ্রামে হুসাইন মোকাম প্রতিষ্ঠা করে পহেলা মহররম থেকে দশ দিনব্যাপী আশুরা উদযাপন শুরু করেন।

এরপর ধারাবাহিকভাবে বিরামদি ফকিরের ছেলে ইমরাহিম ফকির এবং ইবরাহিম ফকিরের ছেলে ইসমাইল ফকির এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। ইসমাইল ফকিরের মৃত্যুর পর তার ভাই হরমুজ ফকিরের ছেলে আব্দুল আজিজ ফকির তা পালন করেন। বর্তমানে আব্দুল আজিজ ফকিরের ছেলে মুজাহাদুল ফকির ও একই পরিবারের সাজ্জাদুল ফকির আশুরা পালন করে আসছেন বলে জানান তিনি।

হুসাইন মোকামের বর্তমান তত্ত্বাবধানকারী মুজাহাদুল ফকির জানান, আমাদের পূর্ব পুরুষরা ৩০০ বছর আগে থেকেই দশ দিনব্যাপী আশুরা পালন করতেন। আমরা তা অব্যাহত রেখেছি।

নওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, জুড়াইল গ্রামে ১০ দিনব্যাপী আশুরা পালনের বিষয়টি আমরাও ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। প্রবীণদের কাছে শুনেছি প্রায় ৩০০ বছর আগে থেকে এ গ্রামে আশুরা পালিত হয়ে আসছে। এটি বর্তমানে প্রাচীন ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

জিয়াউর রহমান/এমএসআর