মাহমুদুল হাসান জীবন। বয়স ১০ বছর। অন্য আট-১০টা শিশুর মতো সারাদিন হেসেখেলে বেড়াত। অভাবের সংসারে জীবনের হাসিমাখা মুখেই সুখ খুঁজে পেত সবাই। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। সাইকেল থেকে পড়ে ভেঙে যায় তার বাম হাতটি। কী করবে, কোথায় যাবে, কার পরামর্শ নেবে? ভেবে উঠতে পারেনি জীবনের দরিদ্র বাবা।  

অর্থাভাবে কোণঠাসা বাবা দারস্থ হন হাতুড়ে চিকিৎসকের। তখনও ব্যথায় কাতর থাকত অশ্রুসিক্ত জীবনের মুখ। সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে স্থানীয় লোকজনের পরামর্শে ছুটে যান কবিরাজের কাছে। কিন্তু দিন যত যায় বাড়তে থাকে জীবনযন্ত্রণা। ছোট্ট জীবন ভীষণ সুস্থ হয়ে পড়ে।

জানা গেছে, জীবনের বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রী। জীবনের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি হাঁপিয়ে উঠেন। এই দুঃসময়ে এগিয়ে আসে তার দাদা। স্থানীয় এক স্কুলের নৈশপ্রহরী তিনি। সমাজের বিভিন্ন লোকের কাছে হাত পেতে কোনো রকমে নাতি জীবনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। কিন্তু ততদিনে দেরি হয়ে গেছে। জীবনের হাতে পচন ধরে গেছে। সেই পচন ছড়িয়ে যাচ্ছে।

সেখানে কিছু দিন চিকিৎসা করানোর পর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু খরচ জোগাতে না পেরে থমকে যায় জীবনের চিকিৎসা। হাতের ব্যথায় কাতর জীবনকে ক্লিনিক থেকে বাড়িতে নিয়ে যায়। জীবনের জীবন হয়ে যায় অনিশ্চিত। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় বাড়তে থাকে দুশ্চিন্তা। পচন ধরা হাত নিয়ে জীবন ধীরে ধীরে পঙ্গুত্বের দিকে এগোতে থাকে।

সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছোট্ট জীবনের করুণ পরিণতির কথা জানতে পারেন রংপুর জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার। সোমবার (২৩ আগস্ট) সকালে তার কার্যালয়ে ডেকে নেন অসুস্থ জীবন ও তার দাদাকে। সেখানে তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে জীবনের চিকিৎসার ব্যয়ভারের দায়িত্ব নেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য জীবনকে ঢাকায় পাঠানোর আশ্বাসও দেন।

শিশু জীবনের মাথায় যখন পুলিশ সুপার হাত রাখেন তখন তার দাদার চোখে পানি টলমল করছে। জীবনের মাথায় হাত বুলিয়ে সাহস দেন এসপি বিপ্লব কুমার সরকার। এ সময় জীবন যেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্নে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। হাত ভাঙার ব্যথায় হাসতে ভুলে যাওয়া জীবনের চোখ বেয়ে ঝরতে থাকে আনন্দের অশ্রুধারা। জীবনের দাদাও কান্নায় ভেঙে পড়লে সেখানে থাকা সকলেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।  

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, জীবনের বাবা দিনমজুর। সাইকেল দুর্ঘটনার পর সুচিকিৎসার অভাবে পঙ্গুত্বের দিকে যেতে থাকা জীবনের গল্প খুবই করুণ। ঘটনাটি ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জানার পর জীবনের উন্নত চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। এ রকম অনেক পরিবার, যারা অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছে না, সমাজের বিত্তবান মানুষদের উচিত তাদের পাশে এগিয়ে আসা।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি