প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সেতুটির অনুমোদন করানো হয়

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দিঘারকান্দা বাইপাস মোড় থেকে ঢাকা-ফুলবাড়িয়া বাইপাস সড়ক ধরে কিছুদূর এগোলেই শতাব্দী আবাসন প্রকল্প। প্রকল্পের জায়গাজুড়ে বিস্তীর্ণ সবুজ ঘাসের মাঠ। বাইপাস সড়কের সামনেই ফাঁকা একটি স্থানে দেখা মিলবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে কনক্রিটের একটি সেতু। আবাসন প্রকল্পের সংযোগ সড়কে সেতুটি নির্মাণ দেখানো হলেও আদতে নেই কোনো সংযোগ সড়ক।

সেতুটিতে সাঁটানো নামফলক থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বয়ড়া ইউনিয়নে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট কর্মসূচির আওতায় ৩৯ ফুট দীর্ঘ ওই সেতুটি নির্মিত হয়। সেতুটির নির্মাণকাজ করেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের মেসার্স দুর্গা এন্টারপ্রাইজ। যেখানে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩১ লাখ ১৭ হাজার ৪৮২ টাকা।

স্থানীয়দের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বললে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাশেদুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি বলেন, জনমানবহীন ও গুরুত্বহীন একটি স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে এই কংক্রিটের সেতু। এমন অনেক স্থান রয়েছে, যেখানে বছরের পর বছর পার হলেও সেখানে সেতু হয় না। অথচ সংযোগ সড়ক ছাড়াই নির্দিষ্ট কারও স্বার্থে সরকারি এত টাকা এখানে ব্যয় করা হলো। এখানে এই সেতুর কী প্রয়োজন ছিল, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

হাকিম মিয়া নামের একজন বলেন, এত টেহা খরচ কইরা ক্যালেইগ্যা এই জাগাত ব্রিজ করল, এইডা আমরা কইতে পারমু না। এইডা দিয়া মাইনষে গরু চরাবার লইয়া যায়। আর কিছু মানুষ ব্রিজ পাড় হইয়া জমি দেখবার যায়। এ ছাড়া এই সেতুর তো কোনো উপকার দেহি না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনিরুল হক ফারুক রেজা বলেন, সেতুটি আমার সময়ে করা হয়নি। তাই আমি এটির সম্পর্কে অবগত নই। এমন স্থানে সেতু করার কথাও নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেতু নির্মাণের সময়কালীন সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ছিলেন মমিনুর রহমান। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আবাসন প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সেতুটির অনুমোদন করিয়েছিলেন। আমরা সেতুটির জন্য প্রস্তাবনাও পাঠাইনি। শুধু বাস্তবায়ন করেছি।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, রাজনৈতিক কিংবা সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাই হোক, কারও না কারও মাধ্যমে এ টাকা এসেছে। জনগণের টাকা জনগণের কোনো কাজে লাগেনি। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে প্রায়ই অকাজে সরকারের লাখো কোটি টাকা অপচয় হয়। এগুলো প্রকাশ হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাই বারবার এসব কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, যেভাবেই কাজটি হোক, তদন্ত সাপেক্ষে অপচয়কারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অন্তত একটি শাস্তির ব্যবস্থা করা হলে এমন কাজ করার আর সাহস পাবে না।

ময়মনসিংহ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বলেন, যেখানে মানুষের চলাচল রয়েছে কিংবা কৃষকের ফসল আনা-নেওয়ায় উপকার হয়, এমন স্থানে সেতুগুলো করা হয়। যেখানে মানুষের চলাচল রয়েছে কিংবা কৃষকের ফসল আনা-নেওয়ায় উপকার হয়। কিন্তু ওই স্থানটিতে কেন সেতুটি করা হলো, সে বিষয়ে আমি বলতে পারছি না।

উবায়দুল হক/এনএ