২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৪-তে

পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের লোকালয়ে বেড়েছে বাঘের আনাগোনা। এ জন্য বাঘের গর্জনও ভেসে আসছে লোকালয়ে। তা ছাড়া আগের তুলনায় বাঘের আনাগোনা ও পায়ের চিহ্ন বেশি দেখা যাচ্ছে সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে বন বিভাগ বলছে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।

সুন্দরবন উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের গোলাখালি গ্রাম। সুন্দরবনের চরে অবস্থিত গ্রামটি। গোলাখালি গ্রামের মধ্যপাড়ার বাসিন্দা আবুল হোসেন গাজীর ছেলে বনজীবী বিল্লাল হোসেন। সুন্দরবন ও উপকূলীয় নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি।

খুলনা বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৫ সালে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি। ২০১৮ সালের জরিপে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৪টি। ২০২১-২২ সালে সুন্দরবনে বাঘ গণনার পরিকল্পনা রয়েছে। গণনা শেষে বর্তমানে সুন্দরবনে বাঘের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে। তবে ধারণা করা যায়, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।

বিল্লাল হোসেন বলেন, চার দিন আগে রাত ১১টার দিকে হঠাৎ প্রচণ্ড বেগে বাঘের গর্জন ভেসে আসতে শুরু করে। প্রথমে আঁতকে উঠেছিলাম বাঘ গ্রামে ঢুকে পড়ল কি না। কিছুক্ষণ পরই বুঝতে পারলাম বাঘটি গ্রামের মধ্যে নয়, বনেই ডাকছে। এটি মূলত পুরুষ বাঘ। পুরুষ বাঘের গর্জন জোরে শোনা যায়। স্ত্রী বাঘের গর্জন অতটা জোরে হয় না। এক মাসের মধ্যে এমন তিনবার বাঘের গর্জন শুনেছি। গত কয়েক বছর পর এমনটা শোনা গেল।

কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, সুন্দরবনে পাশেই দ্বীপ গ্রাম গোলাখালি। বর্তমানে বাঘের প্রজনন মৌসুম চলছে। এ মৌসুমে বাঘ ও বাঘিনী একত্র হয়। অনেক সময় যখন বাঘ বাঘিনীকে তাড়া করে, তখন ডাকাডাকি করে। তখনই মূলত সেই আওয়াজ লোকালয়ে ভেসে আসে।

পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্চের বুড়িগোয়ালীনি ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহম্মেদ জানান, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। বাঘের বিচরণ ও পায়ের ছাপ প্রায়ই লক্ষ করা যায়। তা ছাড়া বর্তমানে বাঘের প্রজনন মৌসুম শুরু হয়েছে। এ কারণে বাঘের গর্জন অনেক সময় লোকালয়ে ভেসে আসছে। কয়েক বছর আগে বাঘের এমন বিচরণ দেখা যায়নি। চার বছর আগে বাঘশুমারি করা হয়েছিল, তখন সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১১৪টি। তবে এখন এই সংখ্যা আরও বাড়বে।

চলতি বছর দুই মৌয়াল ও একজন বাওয়ালি সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন। এতে অনেকেই মনে করছেন, সুন্দরবনে বাঘের খাদ্য-সংকট দেখা দিয়েছে। সে কারণে বাঘ মানুষের ওপর আক্রমণ করছে। 

তবে এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্চের কর্মকর্তা মো. আবুল হাসান। তিনি বলেন, করোনাকালীন সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। এতে হরিণ, বানর ও শূকরের পরিমাণ বেড়েছে। বাঘের খাদ্য মূলত এই তিন বন্য প্রাণী। হরিণ, বানর ও শূকরের বংশবিস্তার বেশি হওয়ায় সুন্দরবনে বাঘের খাদ্য-সংকট এটি বলা যাবে না। বরং সুন্দরবনে এখন বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। সে কারণে বিভিন্ন সময়ে জেলে ও বাওয়ালিদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে।

তিনি বলেন, ওয়াইল্ড টিম নামের একটি সংগঠন সুন্দরবনে বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করত। তবে তাদের প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন আর তাদের কোনো কার্যক্রম নেই। বাঘের গর্জন লোকালয়ে আসছে, এমন খবরে ঘটনাস্থলে গিয়ে অনুসন্ধানও করা হয়েছে।

খুলনা বন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মো. মহসিন হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, ২০১৮ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা এখন ১১৪টি। তার আগে ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০৬টি। ২০২১-২২ সালে সুন্দরবনে বাঘ গণনার পরিকল্পনা রয়েছে। তখন প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে। তবে ধারণা করা যায়, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।

সুন্দরবনের খাদ্যসংকটে বাঘ জেলে ও বাওয়ালিদের ওপর আক্রমণ করছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সুন্দরবনে বাঘের কোনো খাদ্য-সংকট নেই। সুন্দরবন হচ্ছে বাঘের আবাসভূমি। জেলে-বাওয়ালিরা বাঘের ভূমিতে যাওয়ার ফলে বাঘ আক্রমণ করছে। কেউ কেউ নিহত হচ্ছে। তাদের পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। গত ২০ বছরে দুই শতাধিক জেলে-বাওয়ালি বাঘের আক্রমণে নিহত হয়েছেন।

আকরামুল ইসলাম/এনএ