প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা কিশোরগঞ্জের নিকলী বেড়িবাঁধ হাওর এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। সাগরের মতো থইথই জলরাশির অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগে চলছে হাজারো পর্যটকের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। হাওরে আনন্দ আর হৈ হুল্লোড়ে মেতেছেন সবাই। এতে খুশি স্থানীয় পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীসহ ট্রলার ও নৌকার মাঝিরা। 

জানা গেছে, ২০০০ সালে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা সদরকে বর্ষার প্রচণ্ড ঢেউয়ের কবল থেকে রক্ষায় সরকার পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ তৈরি করে। একই সময় ভাঙনপ্রবণ উপজেলার ছাতিরচর গ্রাম রক্ষায় রোপণ করা হয় হাজারো করচগাছ। দৃষ্টিনন্দন দীর্ঘ বেড়িবাঁধ, ভাসমান পানিসহিষ্ণু করচবন এবং সাগরের ন্যায় বর্ষার দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি ‌‌পর্যটকদের মন কাড়ে। এ হাওর জলাভূমির ভিডিও গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে তিন-চার বছর ধরে ভ্রমণবিলাসী ও সৌন্দর্য প্রেমিকদের ঢল নামে এই হাওর এলাকায়।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকরা দল বেঁধে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও বাস নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বর্ষায় ছুটে আসেন এই পর্যটন এলাকায়। পর্যটকরা টায়ার-টিউব নিয়ে জলকেলি, নৌকা ও স্পিডবোটে দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশিতে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি বিস্তীর্ণ হাওরের বুকে ভাসমান করচবনের শীতল ছায়ায় প্রিয়জনদের নিয়ে মেতে ওঠেন ভিন্ন রকম আনন্দে।



কোনো কোনো পর্যটক দল নৌকায় ঘুরে ঘুরে হাওর জলরাশির অপার সৌন্দর্য, স্রোতের গর্জন আর পানির ছলাৎ ছলাৎ ও কলকল ধ্বনি উপভোগ করতে রাত পর্যন্ত কাটান এখানে। 

করোনার কারণে হাওরে পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। তবে গত ১৯ আগস্ট থেকে সরকারি নির্দেশে সব পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। তখন থেকেই নিকলী বেড়িবাঁধ হাওর পর্যটন এলাকায় পর্যটকদের ঢল নামতে শুরু করে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক আসেন। তবে শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিনে পর্যটকদের ঢল নামে।

ঢাকার উত্তরা থেকে ঘুরতে আসা মেহেদী হাসান নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বন্ধুদের নিয়ে বাইকে করে ঢাকা থেকে এসেছি। হাওরে গতবারও ঘুরতে এসেছিলাম। এবার বর্ষার শুরুতেই পরিকল্পনা ছিল তবে করোনার কারণে বন্ধ থাকার জন্য পরে আসতে হল। হাওরে ঘুরে আমাদের ভালো লেগেছে।

যাত্রবাড়ী থেকে আসা হিমেল চৌধুরী জানান, পরিবারের লোকজন নিয়ে ছুটির দিনে হাওর ভ্রমণ করতে এসেছি। কারণ ঢাকা থেকে সকালে আসলে সারাদিন হাওর ঘুরে দেখে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরা যাবে তাই হাওরে ঘুরতে আসা। তবে কিছু অসাধু লোক মানুষকে জিম্মি করে নৌকায় বেশি ভাড়া আদায় করছে। যা মোটেও শোভনীয় নয়। হাওরপ্রিয় দর্শনার্থীদের স্বার্থে প্রশাসনের এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। 



পর্যটক নিয়ে হাওরে ঘুরতে যাওয়া নৌকার মাঝি রবিউল আওয়াল ঢাকা পোস্টকে জানান, এত দিন ধরে করোনার কারণে বন্ধ থাকার পর গত ১৯ আগস্ট হাওর খুলে দেওয়ায় পর থেকে মানুষ আসতে শুরু করেছে। তবে শুক্রবার ও শনিবারে বেশি মানুষ হাওরে বেড়াতে আসে। এভাবে মানুষ হাওরে বেড়াতে আসলে তাদের নিয়ে নৌকায় ঘুরে এ মৌসুমে আমাদের কিছু আয় হয়।

নিকলী উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা মো. আসসাদিকজামান ঢাকা পোস্টকে জানান, সরকারি নির্দেশনা মতে গত ১৯ আগস্ট থেকে হাওর পর্যটন এলাকা খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে সরকারিবিধি মেনেই পর্যটকদের হাওরে ভ্রমণ করতে হবে। বিধি না মানলে জরিমানা গুনতে হবে। এ ছাড়া পর্যটকটদের নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকটি টিম কাজ করছে। 

এসকে রাসেল/আরএআর