ট্রলারে সর্বশেষ যাত্রী ওঠেন মনিপুর ঘাট থেকে। সেখান থেকে কিছু দূর পাড়ি দিলেই শেষ গন্তব্য আনন্দবাজার ঘাট। তবে ঘাট থেকে মাত্র ১০-১৫ মিনিটের দূরত্ব বাকি থাকতেই যাত্রীবাহী ট্রলারটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ডুবে যায়।

শুক্রবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের লইসকা বিলে বালুবোঝাই ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় শতাধিক যাত্রীবোঝাই ট্রলারটি। বিকেল থেকে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপরও নিখোঁজ রয়েছেন অর্ধশতাধিক যাত্রী। 

যাত্রীবাহী ট্রলারটি বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ঘাট থেকে জেলা শহরের আনন্দবাজার ঘাটের দিকে আসছিল। এ পথের দূরত্ব প্রায় ১১ থেকে ১২ কিলোমিটার। এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো। এটিই ছিল দিনের যাত্রীবাহী শেষ নৌযান।  

নিহতদের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় জানা গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের পৈরতলা এলাকার আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫) ও ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজল বেগম (৪০), দাতিয়ারা এলাকার মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মিম (১২), সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের সাদেরকপুর গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে তানভীর (৮), চিলোকুট গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার শিশু কন্যা তাকুয়া (৮), নরসিংসার গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (৭) ও ভাটপাড়া গ্রামের ঝারু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮)।

আরও রয়েছেন, বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে আরিফ বিল্লাহ (২০), বেড়াগাঁও গ্রামের মৃত মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৭) ও তার মেয়ে মুন্নি (১০), আব্দুল হাসিমের স্ত্রী কমলা বেগম (৫২), নূরপুর গ্রামের মৃত রাজ্জাক মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম (৫০), আদমপুর গ্রামের অখিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনী বিশ্বাস (৩০) ও পরিমল বিশ্বাসের মেয়ে তিথিবা বিশ্বাস (২) এবং ময়মনসিংহের খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৪৫)।

রাত ১১টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে ১৫ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহের সঙ্গে দাফনের জন্য স্বজনদের হাতে ২০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা তুলে দেওয়া হয়েছে।
 
ট্রলারডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী আলী আক্তার রেজভী জানান, লইসকা বিল আসার পর বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বালুবোঝাই ট্রলারের সঙ্গে তাদের নৌযানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তাদের নৌযানটি ডুবে যায়। কয়েকজন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও অনেকেই পানিতে তলিয়ে যান।
 
বিজয়নগর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের জহিরুল ইসলাম জানান, নববধূ শারমিন আক্তারকে নিয়ে ট্রলারে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন তিনি। ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার সময় তিনি সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও স্ত্রীকে টেনে তুলতে পারেননি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খাঁন জানান, নিখোঁজদের উদ্ধারে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন। নিহতদের প্রত্যেকের দাফনের জন্য পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আজিজুল সঞ্চয়/আরএইচ