অতিবৃষ্টি ও পানির চাপে পঞ্চগড়ের সুগার মিল থেকে মাড়েয়া হয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা সড়কের মানিকপীর ভক্তেরবাড়ি নামক সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় সড়ক দিয়ে পথচারীসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।

শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে জেলার বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম ইউনিয়নের মানিকপীর ভক্তেরবাড়ি এলাকায় ভক্তেরবাড়ি সেতুর উত্তর পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে যায় এবং দক্ষিণ পাশের সংযোগ সড়কও ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে ওই এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। আর অতিরিক্ত বর্ষণে পানির স্রোত বেশি হওয়ায় হঠাৎ শুক্রবার বিকেলে ভক্তেরবাড়ি সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে যায়। এতে সদর, বোদা ও দেবীগঞ্জসহ তিন উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বাসিন্দা ছাড়াও জেলা শহর থেকে দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরে যাতায়াতের এই সড়কটি দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ও ছোট-বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

যাতায়াত বন্ধ হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে চলাচলকারীরা। তাদের এখন দীর্ঘ পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ ও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মাণ করায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় সংযোগ সড়কটি ভেঙে গেছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের গড়ের ডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, গত কয়েক দিন বৃষ্টিপাতের কারণে হঠাৎ সেতুটি হেলে পড়ে এবং সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। আমরা এখন আর চলাচল করতে পারছি না। ফলে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। সমস্যাটি সমাধানের প্রশাসনের দ্রুত সুদৃষ্টি কামনা করছি।

কলেজছাত্র হাসানুজ্জামান হাসান বলেন, আমরা প্রতিদিনি ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি কিন্তু হঠাৎ সেতু ও সড়ক ভেঙে যাওয়ায় আমরা হাজার হাজার মানুষ চলাচল করতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়েছি। রাস্তাটি যদি ভালো সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হতো, তাহলে এমন ভাঙন দেখা দিত না।

বোদা উপজেলার বেংহারিয় বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, পানির অতিরিক্ত স্রোতের কারণে সেতুর দক্ষিণ পাশের সেতুর একটি অংশ ও সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। পরে স্থানীয়রা আমাকে বিষয়টি জানালে ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়ক জনপথ দপ্তরকে জানাই। পরে জেলা প্রশাসক, বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

পঞ্চগড় সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, সেতুর উত্তর পাশে ১৮ ফুট সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। সেতুর দক্ষিণ পাশে সংযোগ সড়কও ভাঙতে শুরু করেছে। ২০১৯-১০ অর্থবছরে মানিকপীর ভক্তেরবাড়ি সেতুর নির্মাণকাজ করা হয়ে ছিল। গত অর্থবছরেও দুই কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির ১১ কিলোমিটার সংস্কারকাজ করা হয়েছে। তবে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পঞ্চগড় সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, অতিরক্তি পানির চাপে সেতুর সংযোগ সড়কটি ভেঙে গেছে। সেখানে বেইলি সেতু নির্মাণ করা হবে। সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন এবং সেখানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে নাকি আগের সেতুর মেরামত করা হবে, তা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ভক্তেরবাড়ি সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙেছে। আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আপাতত চলাচলের জন্য সেখানে বেইলি সেতু নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মো. রনি মিয়াজী/এনএ