ঢাকার সঙ্গে দূরত্ব কমছে সুনামগঞ্জের
হাওর-ভাটির জেলা সুনামগঞ্জ। জেলার শাল্লা ও ধর্মপাশা উপজেলার সঙ্গে আজও স্থাপিত হয়নি সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। তবে আশার খবর হচ্ছে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বিকল্প সড়ক যোগাযোগ চালুর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বিশেষ করে কুশিয়ারা নদীতে সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম সেতুর কাজ এখন দৃশ্যমান। সেতুর কাজ শেষ হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জবাসীর যাতায়াত দূরত্ব কমবে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। এতে সাশ্রয় হবে সময় ও অর্থের।
সড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্ট এবং জগন্নাথপুরের সুধীজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ জগন্নাথপুর আউশকান্দি সড়ক নির্মাণে হাত দেন। কিন্তু ২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকার রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজ ও বিকল্প সড়ক প্রকল্পের কাজ বাতিল করে দেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘সবুজ পাতায়’ ফের প্রকল্পটি নিয়ে আসেন। ফলে আবারও পুরোদমে কাজ শুরু হয়।
বিজ্ঞাপন
ইতোমধ্যে পরিকল্পনামন্ত্রীর আগ্রহের কারণে সড়কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে সেতু নির্মাণের কাজ। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে পরিকল্পনামন্ত্রীর উদ্যোগে বহুল কাঙ্ক্ষিত কুশিয়ারা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে সেতুর কাজ প্রায় ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে। দুই দিকের দৃষ্টিননন্দন অ্যাপ্রোচের কাজ শেষ হয়েছে। মূল সেতুর কাজও প্রায় অর্ধেক শেষ।
বিজ্ঞাপন
সড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ৭০২ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৩৩ ফুট প্রস্থের এই সেতুটি সিলেট বিভাগের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু। দুই দিকের দীর্ঘ অ্যাপ্রোচে রয়েছে দুটি কালভার্ট। সেতু নির্মাণে ১৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে সেতু নির্মাণে জড়িত চায়না ‘সিআর ২৪বি’ নামের সংস্থাটি করোনার কারণে তাদের সেতু বিশেষজ্ঞদের না পাঠানোয় গত বছর থমকে ছিল কাজ। অবশেষে দ্রুত কাজ শেষ করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ পদ্মা ও মেঘনা-গোমতি নদীতে সেতু নির্মাণে যুক্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দেশীয় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কাজ বাস্তবায়ন করছে।
সরেজমিনে রাণীগঞ্জ সেতুতে দেখা যায়, দ্রুতগতিতে কাজ করছেন শ্রমিকরা। কাজের সমন্বয় করছেন বিশেষজ্ঞসহ সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা। সেতুর নিচে স্থাপিত ল্যাবে সেতুতে ব্যবহার করা নির্মাণ উপকরণ পরীক্ষা করে ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। পরীক্ষার পর স্যাম্পলগুলো নির্ধারিত স্থানে থরে থরে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। নদীর উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের অ্যাপ্রোচের কাজ শেষ। এখন অপেক্ষা ঢালাইয়ের।
রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কালাম বলেন, কুশিয়ারা সেতু আমাদের সময়ে শেষ হবে কল্পনাও করিনি। কিন্তু এখন আমার চোখের সামনেই সেতুর কাজ দ্রুত চলছে। নদীর ওপর মূল অংশে সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। এখন প্রতিদিনই দৃশ্যমান হচ্ছে আমাদের স্বপ্ন।
তিনি বলেন, সিলেট শহর ঘুরে আমাদের ঢাকা যেতে হতো। কিন্তু সেতুর কাজ শেষ হলে আমরা আড়াই ঘণ্টা সময় বাঁচিয়ে সহজে ও কম খরচে যাতায়াত করতে পারব।
একই এলাকার বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, দেশের উত্তরপূর্ব প্রান্তের শেষ জেলা সুনামগঞ্জ। আমাদের সিলেট শহর হয়ে ঢাকায় যেতে হয়। পাগলা-আউশকান্দি সড়কের কাজ শেষ হওয়ায় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে আমাদের বিকল্প যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কুশিয়ারা সেতুটি হলেই আমরা কম সময়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বিকল্প যাতায়াত করতে পারব।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম রাণীগঞ্জ সেতুর কাজ শেষ পর্যায়ে। নদীর তলদেশের কাজ শেষ। উপরিভাগের কাজও শেষ হওয়ার পথে। করোনার কারণে গত বছর চীনা বিশেষজ্ঞরা না আসায় এখন দেশীয় বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। আগামী বছরের শুরুর দিকেই সেতুর কাজ শেষ হবে।
এসপি