‘বাড়ির চারদিকে পানি, এবার অনেক টাকা খরচ করে বাড়ির-ভিটা উঁচু করছি, দেহি তো এলাও বাড়িত পানি উডে নাই। কিন্তু এলা উঠপার চায়। আজকা ১৫ দিন থাকি পানি।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বলদিপাড়া গ্রামের হালিমা বেগম (৫০)।

তিনি আরও বলেন, নিজের তো ভুই (জমি) নাই। মানষের ভুই (জমি) আদি (বর্গা) নিয়া শ্যালো মেশিন দিয়া পানি দিয়া আবাদ করছি। তাইও তো পানিতে তলে গেইছে। কী হইবে? বানের জন্য কামাই-কাজ নাই। এক দিন বাজার করলে তিন দিন নাই। খুব সমস্যাত পড়ছি বাহে।

ওই গ্রামের বাবু মিয়া নামের আরও একজন বলেন, আমি মনে করছিলাম এ বছর বন্যা হবে না। তাই তিন বিঘা জমিতে আমন আবাদ করছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু বন্যার পানিতে আজ ১০ থেকে আমার আমন খেত পানি নিচে। ধারণা করছি এখন পানি নেমে গেলেও আর আবাদ হবে না। দুশ্চিন্তা করে কী হবে? আমার তো আর একার ক্ষতি হয় নাই, সবারে হয়েছে।

এদিকে উজানের ঢলে কয়েক দিন ধরে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে চর, দ্বীপচর ও নদী অববাহিকার নিচু এলাকার অন্তত ৬০ হাজার পানিবন্দি মানুষ। এসব এলাকার কাঁচা সড়ক তলিয়ে থাকায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। মানুষের পাশিপাশি দেখা দিয়েছে গবাদিপশুরও খাদ্য-সংকট। 

এদিকে চলমান বন্যায় জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ও ১০০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত দীর্ঘদিন পানিতে তলিয়ে থাকায় বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে।

সোমবার (৩১ আগস্ট) স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যার্তদের জন্য ২৮০ মেট্রিক টন চাল ও ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, তা বিতরণের কার্যক্রম চলছে।

নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণ পুর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের অর্ধেক পরিবারই পানিবন্দি জীবন যাপন করছে। সরকারিভাবে গতকাল চার টন চাল পেয়েছি, তা বিতরণ করেছি। এখনো অনেকেই কষ্টে আছে।

মো. জুয়েল রানা/এনএ