রাজশাহীতে বারির মাঠ গবেষণা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা
রাজশাহীতে নতুন ছয়তলা ভবন পাচ্ছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)। গবেষণাগার ছাড়াও একই ছাদের নিচে আসবে রাজশাহীর বিভাগীয় কার্যালয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) রাজশাহীর শ্যামপুর ক্যাম্পাসের ভেতরে পুরোনো এসআরডিআই ভবনের নির্মাণ শুরুর অপেক্ষায় এই ভবনটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে স্থানে বহুতল এই ভবন নির্মাণ হচ্ছে, তার চারপাশেই বারির বিভিন্ন গবেষণা প্লট। ভবনটি নির্মাণ হলে এখানে প্রান্তিক কৃষকসহ সেবাগ্রহীতাদের সমাগম বাড়বে। এতে বারির গবেষণা কার্যক্রমসহ আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
একই সঙ্গে এসআরডিআই এর উদ্ভাবিত প্রযুক্তির প্রচার ও প্রসারেও ব্যাঘাত ঘটবে। মহাসড়ক থেকে দীর্ঘ প্রায় এক কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে সেবা নিতে আসতেও ভোগান্তি পোহাতে হবে সেবাগ্রহীতাদের।
বিষয়টি ভাবাচ্ছে এসআরডিআই ও বারির স্থানীয় কর্তাদের। উত্তরণের উপায় হিসেবে এসআরডিআই ভবনটি গবেষণা মাঠের মাঝখানের পরিবর্তে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশে নির্মাণে সম্মত দুপক্ষই।
এ নিয়ে ২৪ আগস্ট বারির রাজশাহীর সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে পত্র পাঠান এসআরডিআই’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও সংস্থার ফিল্ড সার্ভিস উইং এর পরিচালক ড. কামরুজ্জামান। তাতে বর্তমান নির্ধারিত স্থানের পরিবর্তে বারি ক্যাম্পাসের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশে এসআরডিআই ভবন নির্মাণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ড. কামরুজ্জামান বলেন, পৃথক প্রতিষ্ঠান হলেও এসআরডিআই’র নিজস্ব কোনো প্রবেশপথ নেই। ফলে সেবাগ্রহীতা, কৃষক ছাড়াও গবেষক, ছাত্র-শিক্ষক ও অন্যান্য উপকারভোগীদের প্রধান সড়ক থেকে বারির অভ্যন্তরে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে হয়। এটি সবার জন্য ভোগান্তির।
তিনি আরও বলেন, তাছাড়া পুরো পথের দুই ধারে বারির গবেষণা প্লট। যে স্থানে ভবনটি হচ্ছে, সেখানে আমাদের ১১৭ শতাংশ জায়গা রয়েছে। তার চারপাশেও বারির গবেষণা প্লট। গবেষণায় তাদের প্রতিটি শীষের কয়টা ধান, কয়টা চিটা তারও হিসাব রাখতে হয়।
আমাদের প্রতিষ্ঠান কৃষকদের নিয়ে। একজন কৃষক মাটি নিয়ে আমাদের কাছে আসার পথে হয়তো হাত দিলেন, তাতে ধান ঝরে পড়ল। হয়তো একটা শীষ ছিঁড়েও ফেললেন। এতে গবেষণায় বিঘ্ন সৃষ্টি হলে হতেও পারে বলে জানান তিনি।
ড. কামরুজ্জামান বলেন, এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমারা মহাসড়কের ধারে দক্ষিণ পশ্চিম কোণায় ভবন নির্মাণে জায়গা চাইছিলাম। এই জায়গাটিতে ছায়াযুক্ত এবং নিচু। এই জায়গাটা তেমন গবেষণাকাজে লাগে না। সেখানে ভবনটি হলে এসআরডিআই স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসাবে আলাদা থাকবে।
কারো আর গবেষণা মাঠের ভেতরে আসার প্রয়োজন পড়বে না। আমাদেরও নিজস্ব প্রযুক্তির প্রসার ও প্রচারের সুবিধা হবে। সেবাগ্রহীতাদের সেবা গ্রহণ আরও সহজগম্য হবে। বারির গবেষণা কার্যক্রমও সুরক্ষিত থাকবে বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির উচ্চপর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে এসডিআরআই ও বারি ছাড়াও কৃষি মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত, স্থাপত্য বিভাগ এবং পরিকল্পনা কমিশনের লোকজন ছিলেন। এসআরডিআই-এর ভবন নির্মাণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি (সিসিবিএস) প্রকল্পের পরিচালক ড. বেগম সামিয়া সুলতানা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির বৈঠকে আমি বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম। সেখানে পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, আমরা কেন আগে বিয়ষটি নিয়ে ভাবিনি? আমি বলেছি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। তারা পরে অনুরোধ করেছেন, নতুন স্থানে ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে যেনো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন যেন ঝুলে না যায়।
তিনি যোগ করেন, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে ব্যর্থতার দায়ভার আমিও নিতে চাই না। সে জন্য আমি সাত দিন সময় নিয়েছি। আমরা প্রধান সড়কের পাশে জমিটা পাচ্ছি কি না, বা ভবন নির্মাণে কারিগরি কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কি না তা দেখতে হবে। বিষয়টি নিয়ে এরপরই বারির রাজশাহীর সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার বরাবর পত্র পাঠানো হয়।
সেই পত্র পৌঁছেছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে। সংস্থার পরিচালক (সেবা ও সরবরাহ) ড. কামরুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, একেবারেই গবেষণা মাঠের মধ্যে ভবন নির্মাণ না করে রাস্তার পাশে নির্মাণ করতে চায় এসআরডিআই। তারা একটি প্রস্তাব আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। আমরাও বিষয়টি বিবেচনা করছি।
যেহেতু প্রতিষ্ঠান দুটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সেহেতু এবিষয়ে মন্ত্রণালয়েরও সিদ্ধান্ত লাগবে। আমরা এই এই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলে তারা তাদের পছন্দের জায়গায় ভবন নির্মাণ করতে পারবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. বিধান কুমার ভান্ডার জানান, ভবনটি নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যে জায়গায় সেটি বারির একেবারেই পেটের ভেতর। সেখানে ওদের যেমন সমস্যা, আমাদেরও তেমন সমস্যা। সেই থেকে আমরা চিন্তা করলাম, ভবনটি সরিয়ে রাস্তার পাশে আনলে প্রতিষ্ঠানটি স্বতন্ত্র এবং দৃষ্টিগোচর হবে।
বিষয়টি আমরা মৌখিকভাবে বারির মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা হয়। তিনিও ইতিবাচক মত দেন। কিন্তু ওই সময় বিয়ষটি সমাধান হয়নি। পরে প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়ায় চলে যায়। এখন আমরা মূলত চাইছি রাস্তার পাশে যেতে, এতে আমাদেরই সুবিধা হয়। আমরা রাজি, এখন বারি রাজি হলেই বিষয়টি সম্ভব।
জানা গেছে, রাজশাহীতে বারির গবেষণাগার ঘিরে প্রতিষ্ঠা পায় এসআরডিআই। সেখানটাতেই এসআরডিআই-এর ভবন নির্মাণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি (সিসিবিএস) প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ হচ্ছে ছয়তলা অত্যাধুনিক ভবন।
এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ৮০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ভবনের নিচ তলায় থাকবে গ্যারেজ। ষষ্ঠ তলা থাকবে ডর্মেটরি। এছাড়া বাকি চারটা তলা আঞ্চলিক কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয় ও গবেষণাগার থাকবে।
চার বছরের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হবার কথা ছিল। কিন্তু বরাদ্দ পেতেই চলে গেছে ১ বছর। আর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করতে লেগে যায় আরও ৮ মাস। এখন গণপূর্ত অধিদফতরের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএসআর