প্রতিবন্ধী তরুণীকে আটকে রেখে একই দিনে তালাক ও বিয়ে দিলেন ঘটক
বাগেরহাটে বাকপ্রতিবন্ধী এক তরুণীকে (১৯) কৌশলে আটকে রেখে জোরপূর্বক স্বামীকে তালাক দিয়ে অন্য পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ওই তরুণীর বাবার করা মামলায় কথিত ঘটক ও বরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (০২ সেপ্টেম্বর) রাতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার দুইজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর আগে বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
গ্রেফতাররা হলেন- কথিত ঘটক বাগেরহাট সদর উপজেলার পশ্চিমবাগ গ্রামের ইব্রাহিম মল্লিকের ছেলে আনছার মল্লিক (৬৪) এবং বর একই উপজেলার বেনেগাতি এলাকার ইফাজ উদ্দিনের ছেলে ইদ্রিস সেখ (৫০)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ৩০ আগস্ট সকালে ওই তরুণী বাবার বাড়ি থেকে ভ্যানযোগে বাগেরহাট সদর উপজেলার কান্দাপাড়া মামাতো বোনের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে পশ্চিমবাগ এলাকায় ভ্যান থেকে নেমে পানি খেতে ঘটক আনছার মল্লিকের বাড়িতে প্রবেশ করলে আনছার মল্লিকের স্ত্রী ও অজ্ঞাত এক নারী প্রতিবন্ধী তরুণীকে ভালো চাকরি প্রদানসহ নানা প্রলোভন দিয়ে আটকে রাখেন। পরবর্তীতে ৩১ আগস্ট বিকেলে ঘটক ও তার সহযোগীরা একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে ওই তরুণীকে বাগেরহাট শহরে নিয়ে আসেন।
বিজ্ঞাপন
একজন আইনজীবীর চেম্বারে নিয়ে জোরপূর্বক ওই তরুণীকে দিয়ে পূর্বের স্বামীকে তালাক দেওয়ান। পরবর্তীতে একটি কাজি অফিসে নিয়ে ইদ্রিস সেখের সঙ্গে রেজিস্ট্রি করে তার বিয়ে দেওয়া হয়। রাতে বাড়িতে নিয়ে প্রতিবন্ধী ওই তরুণীর সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন ইদ্রিস।
বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) সকালে কৌশলে বিয়েসহ সব ধরনের কাগজপত্র নিয়ে ইদ্রিসের বাড়ি থেকে পালিয়ে স্থানীয় এক নারী নেত্রীর বাড়িতে আশ্রয় নেন প্রতিবন্ধী ওই তরুণী। পরবর্তীতে ওই নারী নেত্রী স্থানীয় চেয়ারম্যানকে খবর দেন। ওই তরুণীর বাবা ঘটক আনছার মল্লিক ও বর ইদ্রিস শেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।
বাকপ্রতিবন্ধী ওই তরুণীর বাবা বলেন, মেয়েটা ঠিক মতো কথা বলতে পারে না। অনেকগুলো কথা বললে দুই একটি কথা বোঝা যায়। আমার মেয়ের সঙ্গে যারা এতো বড় অন্যায় করেছে তাদের কঠিন শাস্তি চাই।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, নির্যাতিত ওই তরুণীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়মিত মামলা দায়ের করেছি। প্রধান দুই আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ওসি বলেন, ঘটনা পর্যালোচনা করে বুঝেছি তালাক-বিয়ে সব কিছুই আসামিদের সাজানো নাটক। এসব কোনো কিছুই মুসলিম আইন অনুযায়ী বৈধ হয়নি। ধর্ষণকে ওই বাকপ্রতিবন্ধী তরুণীর কাছে গ্রহণযোগ্য করতে এসব নাটক সাজিয়েছেন তারা।
তানজীম আহমেদ/আরএআর