দ্বীপাঞ্চলখ্যাত বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার চারপাশে রয়েছে অসংখ্য নদী। নদীবেষ্টিত এই জনপদের বিশেষ একটি নদী হলো সন্ধ্যা নদী। যার দুপাশে রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ফলে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন কর্মসংস্থান এবং এতে লাভবান হচ্ছে সরকার।

তবে এসব করতে গিয়ে একশ্রেণির দখলদারের এখন পোয়াবারো। এ সুযোগে তারা আস্তে আস্তে দখলে নিচ্ছে নদীর পাড়। তারপর দখল নিতে নিতে নদীর ভেতরে ঢোকা। এতে ভরাট হচ্ছে নদী, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার সৌন্দর্য, বিঘ্ন ঘটছে তার স্বাভাবিক প্রবাহে। সর্বোপরি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।

এদিকে দখলের এই মহোৎসবে নির্বিকার দেখা গেছে প্রশাসনকে। এ বিষয়ে নেই কোনো প্রতিকার। তাই ক্ষত নিয়েই বয়ে চলতে হচ্ছে পিরোজপুরের নেছারবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার সন্ধ্যা নদীকে।

পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলা দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা-বাণিজ্য বা শিল্পাঞ্চল নামেই প্রসিদ্ধ। আবার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন বিসিক তাতে ভিন্ন একটি মাত্রা যোগ করেছে। জগৎপট্টি, ইন্দেরহাট, মিয়ারহাট, বরচাকাঠি, জগন্নাতকাঠি বন্দরসহ বেশ কিছু এলাকাজুড়ে চলছে সন্ধ্যা নদী দখল-বাণিজ্য। বছরের পর বছর ধরে উপজেলার নদী দখল করে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ডকইয়ার্ড, বহুতল ভবন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য দোকানপাট।

স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এই দখলের উৎসব। আবার কেউ এর প্রতিবাদ করতে এলে দখলদারদের পেটে যাচ্ছে তাদের বসতভিটা। প্রাণের ঝুঁকি তো থাকছেই। একের পর এক মামলা দিয়ে করা হচ্ছে হয়রানি।

বেশ কয়েকজন স্থানীয় অভিযোগ করে বলেন, পটুয়াখালী থেকে আসা গফ্ফার মৃধার ছালেহিয়া ডকইয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি ডকইয়ার্ডদের বিরুদ্ধে রয়েছে সন্ধ্যা নদীর তীরের অধিকাংশ দখলের অভিযোগ। কিন্তু কেউ ভয়ে তাদের কিছু বলে না।

জানা যায়, ২০১৫ সালে একবার পরিবেশ অধিদপ্তর পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও তার তোয়াক্কা করেননি ছালেহিয়া ডকইয়ার্ডের গফ্ফার মৃধা। এরপর আর পরিবেশ অধিদপ্তর পক্ষ থেকে এসব অবৈধ দখলদারীর বিরুদ্ধে তেমন কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে রাজি হননি ডকইয়ার্ড মালিকদের কেউ।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন জানান, স্থানীয় ভূমিদস্যুদের সমন্বয়ে দূরদূরান্ত থেকে ট্রলার নৌকা আসে, যারা এখান থেকে মাল ওঠায় ও নামায়, সেই জায়গাকে তারা লিজের মাধ্যমে দখল করে রেখেছে। নদীর অনেকাংশ দখল করে তারা সেখানে ডকইয়ার্ড নির্মাণ করেছে। যেগুলো করার কারণে স্বরূপকাঠীর সৌন্দর্য সৌরভ বিলুপ্তির পথে। আমরা জগন্নাথকাঠীবাসী এই ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পাইতে চাই।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী হযরত আলী হিরু জানান, এখানকার কিছু ভূমিদস্যু জমির মতো নদী দখল শুরু করেছে। এতে দিন দিন নদীগুলোর নাব্যসংকট হচ্ছে। আমাদের পরিবেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে যদি নদী-খাল দখল হয়ে যায়, তাহলে স্বরূপকাঠীর পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। তাই এই নদী-খাল দখলমুক্ত করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

স্থানীয় বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, আমাগো নদীর জমি দখল করছে। এ নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করায় আমাগো বাড়িঘর দখল করছে তারা। তাদের কিছু কইলে তারা মামলার ভয় দেখায়।

নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারেফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, সারাদেশের নদীর পাড় বাঁচিয়ে রেখে নদী দখল রোধ করা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার। নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, কাউকে তা দখল করতে দেওয়া হবে না।

ইতোমধ্যে নেছারাবাদ উপজেলায় সন্ধ্যা নদীর দুই পাড় দখল হয়ে গেছে জানালে তিনি বলেন, যে জায়গাগুলো দখলে রয়েছে, তার ব্যাপারে মাননীয় সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম স্যারের নির্দেশনা রয়েছে, তাদের এখান থেকে উচ্ছেদ করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি। যাতে কেউ নদী দখল করে না রাখতে পারে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। যারা উপজেলায় অংশীজন রয়েছে, সবাইকে নিয়ে শিগগিরই নদী দূষণ ও দখলমুক্ত করতে পারি, সে চেষ্টা আমাদের অব্যাহত থাকবে।

এনএ