করোনা মহামারিকালে একটি আইসিইউ বেডের জন্য যখন রোগীর স্বজনদের হাহাকার, তখন দেশের প্রত্যন্ত একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক বছর ধরে অলস পড়ে আছে তিন শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ ইউনিট। প্রয়োজনীয় জনবল ও কিছু সরঞ্জামের অভাবে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাচ্ছে না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসিইউ ইউনিটটি। অথচ এ আইসিইউ ইউনিট চালু হলে করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদেরও চিকিৎসা দেওয়া যাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা মহামারি শুরু হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালটিকে জেলার একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে মহামারির এক বছরের বেশি সময় পার হলেও হাসপাতালটিতে আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে করোনা আক্রান্ত যেসব রোগীদের আইসিইউ সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন- তাদের ঢাকায় রেফার করেই দায় সারছে কর্তৃপক্ষ।

তবে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে হাওর বেষ্টিত নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসিইউর আংশিক সুবিধা নিয়ে আইসিইউ ইউনিট চালু করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সংসদ সদস্য বি. এম. ফরহাদ হোসেন সংগ্রামের উদ্যোগে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির দ্বিতীয় তলায় পুরুষ ওয়ার্ডের ভেতরে স্থাপিত ওই আইসিইউ ইউনিটে তিনটি আইসিইউ বেড, তিনটি কার্ডিয়াক মনিটর এবং তিনটি ইনফিউশন পাম্পসহ প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র রয়েছে। এ ছাড়া নিরবিচ্ছন্ন অক্সিজেন সেবা দেওয়ার জন্য ১৮টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন পোর্টও রয়েছে।

তবে মেডিসিন, কার্ডিওলজিস্ট, এনেসথেশিয়া কনসালট্যান্ট ও প্রশিক্ষিত নার্স এবং হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, সি-প্যাপ ও বাইপ্যাপের মতো প্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জামের অভাবে আইসিইউ ইউনিটটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাচ্ছে না। ফলে এক বছর ধরে আইসিইউ ইউনিটটি কার্যত অলস পড়ে আছে। অবশ্য মাঝে-মধ্যে হৃদরোগ এবং শ্বাসকষ্টজনিত গুরুতর সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের আইসিইউ ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অভিজিৎ রায় বলেন, ‘আইসিইউ বেডগুলো দীর্ঘ দিন ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। কার্ডিওলজিস্ট, মেডিসিন ও এনেসথেশিয়া কনসালট্যান্ট এবং প্রশিক্ষতি নার্সসহ প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতি পেলেই আইসিইউ ইউনিটটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাবে। এগুলোর জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে’।

‘তবে আমরা শুনেছি- আমাদের হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা এবং সি-প্যাপ ও বাইপ্যাপ দেওয়ার কথাবার্তা চলছে। এগুলো পেলে আমরা রোগীদের আইসিইউ সুবিধা দিতে পারব’- উল্লেখ করেন ডা. অভিজিৎ।

তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ সেবার জন্য যন্ত্রপাতির পাশাপাশি প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন। পাশাপাশি বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য ল্যাবও থাকতে হবে। এ ছাড়া নাসিরনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তরল অক্সিজেন প্ল্যান্ট নেই। এ জন্য হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাও ব্যবহার করা যাবে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি বলেই আইসিইউ ইউনিটটি আংশিক চালু হয়েছে। জেলা সদরে আইসিইউ সুবিধা নিশ্চিত হলেই উপজেলায় নজর দেওয়া হবে। জেলা সদরে আইসিইউ সুবিধার জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি’।

এসপি