বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বাজার থেকে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান। ঘটনাটি ধামাচাপ দিতে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এমনকি ওই কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে অবাঞ্ছিত করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. মজিদ সরদার (৭২) ও তার সঙ্গে থাকা আজাহার ওরফে মনু (৬৫) বর্তমানে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এর আগে রোববার (০৫ সেপ্টেম্বর) রাতে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরনগর (আগরপুর) ইউনিয়নের ঠাকুরমল্লিক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, মারধরের শিকার দুজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। এক দিন পার হলেও থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।

জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১৫ এপ্রিল ভোরে বাবুগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের বর্তমান সভাপতি (তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান) খালেদ হোসেন সরদার স্বপনের বাবা আবুল কাসেম সরদার খুন হন। সেই মামলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদার আসামি ছিলেন।

ওই মামলায় বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালত মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদারসহ ১০ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদার খালাস পান। খালাস পাওয়ার দীর্ঘ ১৬ বছর পর ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তিনি নিজ বাড়ি ফিরছিলেন।

আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. মজিদ সরদার জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে আজাহার ওরফে মনুকে সঙ্গে নিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরনগর (আগরপুর) ইউনিয়নের ঠাকুরমল্লিক গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। কামরুল কবিরাজের চায়ের দোকানের সামনে পৌঁছালে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারেকের অনুসারীরা তাদের আটক করে। সেখানে মারধর করে দুজনকে ধরে নিয়ে যায় তারেকুল ইসলামের বাড়িতে। তারেকুল ইসলাম সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খালেদ হোসেন সরদার স্বপনের ভাই।

আ. মজিদ বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান তারেক নিজে তার (মুক্তিযোদ্ধা মজিদ) বাম হাতের আঙুল হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে থেতলে দিয়েছেন। লোহার রড দিয়ে বাম পায়ের হাঁটুর নিচে মারাত্মক জখম করেছেন। মারধরের এক পর্যায়ে খবর পেয়ে মাঝরাতে আগরপুর তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

আহত বৃদ্ধ আজাহার বলেন, বাজারে মারধরের পর আমাদের ধরে নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে হাত-পায়ের নখসহ আঙুল প্লাস (লোহার যন্ত্র) দিয়ে থেতলে দেয়। দুই ঘণ্টা ধরে নির্মম নির্যাতন চালায়।
 
তিনি আরও বলেন, হত্যা মামলার আসামি ছিল মজিদ সরদার। আমি তো কিছুই না। কিন্তু আমাকে মজিদ সরদারের সঙ্গে পেয়ে পাষণ্ডের মতো নির্যাতন চালিয়েছে।

বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরনগর (আগরপুর) ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার তারেকুল ইসলাম তারেক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারা বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা কামরুল হাসান হিমুর লোক। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আটজনের একটি টিম হামলা চালাতে আসে। বিষয়টি স্থানীয়রা ঠিক পেয়ে ধাওয়া করে দুজনকে আটক করে মারধর করে। পরে পুলিশ জানতে পেরে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

তারেক বলেন, আমাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আমি বাদি হয়ে মজিদ ও মনুসহ বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে  বাবুগঞ্জ থানায় এজাহার দাখিল করেছি। আমার ওপর হামলার চেষ্টার প্রতিবাদে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। হামলাকারীদের বিচার যতদিনে না হবে ততদিন আন্দোলন চলবে।

সাবেক চেয়ারম্যান তারেক বলেন, এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের চাচাতো ভাই। এ জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে সভাপতি খালেদ হোসেন সরদার স্বপন জয়কে বাবুগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণার কথা বলেছেন।

বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, মারধরের শিকার বৃদ্ধ মজিদ সরদার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরনগর (সাবেক আগরপুর) ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সরদার তারেকুল ইসলাম তারেক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালিদ হোসেন স্বপনের বাবার হত্যা মামলার আসামি।

মজিদ সরদার ও সাবেক চেয়ারম্যান তারেক একই বাড়ির বাসিন্দা হলেও দীর্ঘ দিন পরে মজিদ সরদার গ্রামে ঢুকলে চেয়ারম্যানের অনুসারীরা তাকে আটকে মারধর করে। খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি।

এদিকে সোমবার বিকেলে মারধরের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিদ সরদার, মনুর বিচার চেয়ে কর্মসূচি পালন করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি