ভুক্তভোগী চার নারী

হতদরিদ্র চার পরিবারকে আয়কর পরিশোধের নোটিশ দিয়েছে বরিশাল উপ কর কমিশনারের কার্যালয়। যাদের নামে আয় কর পরিশোধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে তারা নিজেরাই সরকারি সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে জীবনযাবন করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে। 

যদিও কর কমিশনারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, অন্য কেউ এই চারজনের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এজন্য তাদের নামে নোটিশ গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ না করা হলে তাদের জরিমানা গুনতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপীন চন্দ্র বিশ্বাস মঙ্গলবার (০৭ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছেন, হতদরিদ্র ওই পরিবারগুলো আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদের কথা শুনেছি এবং কর কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। পরিবার চারটি যেন আয়কর পরিশোধ থেকে মুক্ত হন তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, উপজেলার শরিফাবাদ গ্রামের ভ্যানচালক কবির ইসলাম বেপারীর স্ত্রী গৃহিণী কল্পনা বেগম এবং দিনমজুর মহসিন বেপারীর স্ত্রী সুবর্না মোহসিনের নামে গত ২৮ জুলাই নোটিশ আসে। ওই গ্রামের বাসিন্দা মাহিন্দ্রাচালক ফারুক হোসেনের স্ত্রী সেলিনা বেগমের নামে ২২ আগস্ট এবং বিল্বগ্রাম এলাকার দিনমজুর চাঁন মিয়া সরদারের স্ত্রী গৃহিণী মনোয়ারা বেগমের নামে ২৪ আগস্ট নোটিশ আসে। বরিশাল উপ কর কমিশনারের কার্যালয় (বৈতনিক) থেকে উপ কর কমিশনার স্বাক্ষরিত নোটিশগুলো বিভিন্ন তারিখে ইস্যু করা হয়।

এর মধ্যে কল্পনা বেগম ও সুবর্না মহসিনকে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ সালের ১২৪ ধারায় কেন জরিমানা করা হবে না তার কারণ দর্শানোর জন্য ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৩০ ধারায় ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও মনোয়ারা বেগমকে কেন জরিমানা করা হবে না তার কারণ দর্শানোর জন্য ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। অন্যদিকে সেলিনা বেগমকে ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

সুবর্না মোহসিন বলেন, আমার স্বামী দিনমজুর। পরিবারে দুটি প্রতিবন্ধী সন্তান রয়েছে। শুধুমাত্র বসতভিটে ছাড়া আমাদের আর কোনো সম্পত্তি নেই। এখন যে ট্যাক্সের নোটিশ এসেছে তা কোথা থেকে পরিশোধ করব।

কল্পনা বেগম বলেন, আমার স্বামী ভ্যানচালক। এমন কোনো সম্পদ নেই যে আমার নামে আয়কর পরিশোধের জন্য সরকারি চিঠি ইস্যু করতে হবে। 

একই কথা বলেন বিল্বগ্রাম এলাকার দিনমজুর চান মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।  

সেলিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী মাহিন্দ্রাচালক। অথচ আমার নামে আয়কর পরিশোধের নোটিশ করা হয়েছে। এমনকি আয়কর পরিশোধ না করায় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে মর্মে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। 

মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু বলেন, নোটিশপ্রাপ্ত চারজনই অতিদরিদ্র। এদের মধ্যে সুবর্না মোহসিন এবং সেলিনা বেগমের স্বামীর নামে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে খাদ্যসহায়তা কর্মসূচির রেশন কার্ড রয়েছে। অপর দুজন গৃহিণীর স্বামী দিনমজুর। তাদেরকেও সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা নিয়ে চলতে হয়। তাদের আয়কর পরিশোধ করার নোটিশ মনে হয় কোথাও অসঙ্গতি রয়েছে।

কর অঞ্চলের বরিশালের উপ কর কমিশনার মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, চারজনের এনআইডি ব্যবহার করে কেউ হয়তো আয়কর প্রদানের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে। ফলে তাদেরকে কর রিটার্ন দাখিলের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে রিটার্ন দাখিল না করলে  তাদেরকে ন্যূনতম জরিমানা পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। তাদের মধ্যে কেউ অফিসে এসে যোগাযোগ করলে করমুক্ত করার ব্যবস্থা করা হবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর