ঢাকার দোহার উপজেলার পৌরসভা সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে পদ্মা নদী থেকে আসা বটিয়া-রাধানগর খালের উপর অপরিকল্পিত নিচু সেতু নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জ্যোতি ট্রেডার্স।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সামান্য বৃষ্টিতে সেতুর গার্ডারের নিচ পর্যন্ত ছুঁয়ে গেছে পানি। স্থানীয়দের দাবি, সেতুটি নির্মাণ হলে সড়ক পথ চালু থাকলেও যুগযুগ ধরে প্রবহমান খাল দিয়ে নৌযান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। এখনই কোনো নৌযান চলাচল করতে পাছে না বলে জানান তারা। ব্রিজের পিলার ও গার্ডার নিচু হওয়ায় এ অচলাবস্থা হয়েছে। এ কারণে সেতুটির উচ্চতা নিয়ে ইতোমধ্যেই নানা মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন পর সেতুর স্বপ্ন পূরণ হলেও ঐতিহ্যবাহী জয়পাড়া ওরফে দেবীনগর হাটে আসা মালবাহী নৌযান চলাচল করতে পারবে না। এতে দুর্ভোগ বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে এ খাল দিয়ে পদ্মার সঙ্গে উপজেলা সদরের বাণিজ্যিক কেন্দ্র জয়পাড়া হাটের নৌ যোগাযোগ। এটি ইছামতী নদীর সঙ্গেও সংযুক্ত। স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্তমান এ নকশায় ব্রিজটি নির্মিত হলে বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৬ মাস এ পথে মালবাহী নৌ চলাচল বন্ধ রাখতে হতে পারে।

দোহারের বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র জয়পাড়া বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার মাঝি বলেন, ঢাকা জেলা দক্ষিণের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী বাজার হলো জয়পাড়া বাজার। এখানে প্রতি সপ্তাহে হাট বসে। এছাড়া হাটে ফরিদপুর, শরিয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ নৌপথে গবাদি পশু, চাল, ডালসহ উৎপাদিত বিভিন্ন শস্য বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। ভুল নকশায় বা নিচু সেতু নির্মাণ করা হলে জয়পাড়া হাট বা বাজারের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সবচেয়ে বেশি। এক সময় এ হাট মরা হাটে পরিণত হবে। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

স্থানীয় বাসিন্দা আওলাদ হোসেন বলেন, বটিয়ায় সেতু নির্মাণ এ এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি। এটি সবাই চায়। কিন্তু ভুল নকশায় সেতু হোক কেউ চায় না। উচ্চতা বাড়িয়ে সেতু নির্মাণের দাবিতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দিলেও উপজেলা প্রকৌশলী তা মানতে নারাজ। তিনি তখন বলেছিলেন, পানির স্তর বাড়লেও নৌ চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে সেতুর ৬০ ভাগ কাজ। আপনারা এসে দেখে যান এখনও কোনো বন্যা হয়নি। সামান্য একটু বৃষ্টির হওয়াতেই ব্রিজ ছুঁয়ে গেছে পানি। এতেই ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি সেতুর নিচ দিয়ে এখন ডিঙ্গি নৌকা চলাচল করতেও কষ্ট হবে। নিচু সেতু নির্মাণ হওয়ায় এলাকার মানুষ হতাশ হয়েছে।

এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক মো. সেলিম মিয়া বলেন, এ খালে অন্য সেতুগুলোর সঙ্গে পারিপার্শ্বিকতা যাচাই করেই সেতুটি করা হয়েছে। সেতু উঁচু করতে গেলে এপ্রোচের পাশের স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এটা বিবেচনা করেই আমরা নির্মাণ পরিকল্পনা করেছি।

দোহার উপজেলা প্রকৌশলী মো. হানিফ বলেন, সেতুর দুই পাশে এপ্রোচ সড়কের জায়গা না থাকায় মূল অংশ উঁচু করা যাচ্ছে না। বর্ষা মৌসুমে ২/৩ মাস একটু কষ্ট হবে। তবে ছোট নৌযান চলতে পারবে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।

সেতুর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, প্রকৌশলীদের পরামর্শ মেনেই সেতু নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া বছরের বেশিরভাগ সময়ই নদীতে নৌ চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে সেতুটি নির্মিত হলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমি চাই সেতুটি নির্মিত হোক। তবে দোহারের ঐহিত্যবাহী জয়পাড়া বাজার যেন কোনো ক্ষতির মুখে না পড়ে। সেতুটির উচ্চতা বাড়ানো যায় কি না তা নিয়ে প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলব।

ফারুক আহমেদ/এসএসএইচ