চাঁদপুরের বিলাসবহুল লঞ্চ ভ্রমণ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতিদিন চাঁদপুর-ঢাকা এবং ঢাকা-চাঁদপুর রুটে লঞ্চে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছেন। নিরাপদ ভ্রমণ এবং সাশ্রয়ী ভাড়া হওয়ায় লঞ্চ ভ্রমণে ঝুঁকছেন যাত্রীরা। পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রেও লঞ্চ ব্যবহার করছেন ব্যবসায়ীরা।

পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে চাঁদপুর অবস্থিত। ফলে জেলার অধিকাংশ মানুষের কাছে লঞ্চ ভ্রমণ খুবই পছন্দের। প্রতিদিন চাঁদপুরের হাজারো মানুষ ব্যবসা, চাকরি, শিক্ষা, ভ্রমণ ও নানাবিধ কাজের উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকায় আসেন। শুধু চাঁদপুর নয়, আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষও চাঁদপুর এসে লঞ্চে করে কর্মক্ষেত্রে যান।

চাঁদপুর-ঢাকা রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের চাহিদা মতো সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বেশির ভাগ লঞ্চে এসি, উন্নত টয়লেট, প্রথম ও অন্যান্য শ্রেণির কেবিন রয়েছে। যাত্রীরা চাইলে আগাম বুকিং দিয়ে লঞ্চের কেবিনে যাতায়াত করতে পারেন। 

বর্তমানে চাঁদপুর-ঢাকা রুটে ২৪টি লঞ্চ চলাচল করে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ রুটে আরও ১৩টি লঞ্চ চলাচল করে। বিভিন্ন অঞ্চলের লঞ্চসহ মোট ৮০টি লঞ্চ চাঁদপুর ঘাটে আসা যাওয়া করে। চাঁদপুর-ঢাকা এবং ঢাকা-চাঁদপুর রুটে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লঞ্চে যাতায়াতের সুবিধা রয়েছে। লঞ্চের ডেকের ভাড়া ১১৫ টাকা, নন এসি চেয়ারের ভাড়া ১৮০ টাকা, বিজনেস ক্লাস এসি চেয়ারের ভাড়া ৩০০ টাকা, নন এসি সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ৫০০ টাকা, এসি সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ৬০০ টাকা, নন এসি ডাবল কেবিনের ভাড়া ১০০০ টাকা,  এসি ডাবল কেবিনের ভাড়া ১২০০ টাকা, নন এসি মিনি ভিআইপি কেবিন ১৮০০ টাকা, ফ্যামেলি কেবিন ১৫০০ টাকা, ভিআইপি কেবিন ২২০০ টাকা এবং সিআইপি কেবিন ২৫০০ টাকা।

চাঁদপুর থেকে যেসব লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় সেগুলো হচ্ছে- ভোর ৬টায় রফ রফ-৬ (যোগাযোগ- ০১৮১৮০০২০২৯), সকাল ৭টা ২০মিনিটে এমভি সোনার তরী-৩, (যোগাযোগ ০১৭১৬৫০১০৭৭), সকাল ৮টায় ঈগল-৭ (যোগাযোগ ০১৯৬৮৪১৯১০২), সকাল সাড়ে ৮টায় আসা যাওয়া-১, সকাল ৯টায় ঈগল-৩ (যোগাযোগ ০১৮৮৯৮০৫২৮৩), সকাল সাড়ে ৯টায় আল বোরাক (যোগাযোগ ০১৮১৮০০২০২৯) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে মিতালি-৫ (যোগাযোগ ০১৭২১৬৫৯৯৫০), সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বোগদাদিয়া-৯ (যোগাযোগ ০১৭২৮৫৯০৮৪১), বেলা ১১টায় জামাল-২ (যোগাযোগ ০১৮১৮০০২০২৯), দুপুর ১২টায় রফ রফ-২ (যোগাযোগ ০১৮১৮০০২০২৯), দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে শরীয়তপুর-১, দুপুর ১টায় এভি জম জম (যোগাযোগ ০১৩১৬৩৩০৩৯০), দুপুর দেড়টায় সোনার তরী-৫ (যোগাযোগ ০১৭১৬৫০১০৭৭), দুপুর ২টায় ইামাম হাসান-৫ (যোগাযোগ ০১৭১১০০৮৭৭৭), বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে সোনার তরী-২ (যোগাযোগ ০১৭৩৫৪২৭৮০২), বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে বোগদাদিয়া-৮ (যোগাযোগ ০১৭১১০০৮৭৭৭), বিকেল ৫টায় বোগদাদিয়া-৭ (যোগাযোগ ০১৭১২৮২৫৩৭) সন্ধ্যা ৬টায় ইমাম হাসান-৭ (যোগাযোগ ০১৭৯৯৪৯৪২৯৬), সন্ধ্যা ৭টায় ইমাম হাসান (যোগাযোগ ০১৭১১০০৮৭৭৭), রাত ১০টায় মিতালি-৭  (যোগাযোগ ০১৮১৮০০২০২৯), রাত সাড়ে ১১টায় ইমাম হাসান-২ (যোগাযোগ ০১৭১১০০৮৭৭৭), রাত ১১টা ২০ মিনিটে জম জম-১ (যোগাযোগ ০১৭১১০০৮৭৭৭), (যোগাযোগ ০১৭২৪৭৬৬৭২০) রাত ১২টা ১৫ মিনিটে ময়ূর-৭ (যোগাযোগ ০১৭৫৯৯৪৪১৪৪) এবং সব শেষ রাত সাড়ে ১২টায় ময়ূর-২ (যোগাযোগ ০১৮৩৯১০৩৭৪৬)।

তবে লঞ্চ চলাচলের এই সময়সূচি অনেক সময় পরিবর্তন হয়। এই রুটে কয়েক ধরনের লঞ্চ চলাচল করে। এগুলো এক তলা, দুই তলা ও তিন তলা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। কোনো কোনো লঞ্চে এসি আছে। পাশাপাশি এটাচ বাথরুম রয়েছে। এছাড়া ফ্ল্যাট-স্ক্রিন টিভি, সিঙ্গেল ও ডাবল কেবিন, স্টেশনারি শপ, কফি শপ, ছাদে বসার স্থান ও নামাজের স্থানসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। লঞ্চে নিরাপত্তার জন্য আনসার বাহিনী রয়েছে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন। 

এ প্রসঙ্গে লঞ্চ মালিক প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁদপুর লঞ্চঘাটটি দেশের মধ্যে অন্যতম একটি নদী বন্দর। এ ঘাট দিয়ে চাঁদপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার মানুষও যাতায়াত করে। লঞ্চ জার্নি আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ হওয়ার কারণে মানুষ লঞ্চে বেশি যাতায়াত করে। আমরা লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ সব সময় যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা ও নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করি। যাত্রীদের সেবায় আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

লঞ্চের যাত্রী সোহাগী আক্তার ও মাসুম হোসাইন বলেন, সব থেকে আনন্দময় ভ্রমণ হচ্ছে লঞ্চ ভ্রমণ। লঞ্চে হাঁটাচলা থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে সময় কাটানো যায়। যার যেমন সাধ্য তিনি সেভাবে লঞ্চে ভ্রমণ করেন। আগের তুলনায় লঞ্চের ডেকোরেশন অনেক আপডেট হয়েছে। যদিও লঞ্চ টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি। এখানে কোনো যাত্রী ছাউনি নেই। এছাড়া ঘাটের পন্টুন খুব নড়বড়ে। এখানে আধুনিক নৌ নার্মিনাল হলে চাঁদপুর লঞ্চঘাটের চিত্র পাল্টে যাবে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী, শিক্ষার্থী ও বয়স্ক লোকদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা চালু করা প্রয়োজন।

চাঁদপুর নদী বন্দরের পরিবহন পরিদর্শক মো. রেজাউল করিম সুমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁদপুর লঞ্চঘাটটি একটি মধ্যবর্তী স্টেশন। যে কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। চাঁদপুর নদী বন্দরের উন্নয়নের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রজেক্ট রয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন, শিগগিরই নদী বন্দরের কাজ শুরু হবে। যতটুকু সম্ভব আমরা যাত্রীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের পাশাপাশি নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। 

এ বিষয়ে চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুজাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন,  চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই লঞ্চ চলাচল করে। চাঁদপুর ইলিশের শহর হওয়ায় লঞ্চে করে বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ ঘুরতে এখানে আসে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ পুলিশ সর্বদা লঞ্চঘাটে নিয়োজিত রয়েছে। যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছাতে পারেন তার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা আমাদের থাকবে।

শরীফুল ইসলাম/আরএআর