ভালো আবহাওয়া এবং সঠিকভাবে পরিচর্যায় এবার বান্দরবানে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। স্বল্প পুঁজি ও কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় চাষিদের মধ্যে মিষ্টি কুমড়া চাষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় পাইকারি ক্রেতাও মিলছে সহজেই।

জানা গেছে, বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় কম-বেশি মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়। সদর উপজেলার এম্পুপাড়া, টংকাবতী, চিম্বুক, ওয়াইজংশন, বসন্তপাড়া, ব্রিকফিল্ড এলাকা ছাড়াও রুমা ও থানচিতে এবার ব্যাপকভাবে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। স্থানীয় চাহিদার তুলনায় আবাদের পরিমাণ বেশি হওয়ায় জমি থেকেই পাইকারি ক্রেতাদের কাছে চুক্তিতে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করছেন চাষিরা।

মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য জমি তৈরি, সার, কীটনাশক, মজুরি সবকিছু মিলে বিঘা প্রতি খরচ হয় সাত-আট হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৮০০ থেকে ১ হাজার মিষ্টি কুমড়া পাওয়া যায়। যার পাইকারি বাজার দর ২০-২২ হাজার টাকা। তবে স্থানীয় বাজারে খুচরা বিক্রি করলে দ্বিগুণ মুনাফা পাওয়া সম্ভব বলে জানান চাষিরা।

চিম্বুক এলাকার রিং রাউ ম্রো বলেন, চলতি মৌসুমে ৮২ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনও হয়েছে সন্তোষজনক।

একই এলাকার কৃষক ইয়াং ম্রো জানান, অল্প খরচ আর স্বল্প পরিশ্রমে মিষ্টি কুমড়ার ফলন পাওয়া যায়। গাছে ফল আসার পর পরই জমি থেকে পাইকারিভাবে চুক্তিতে বিক্রিও করা যায়। এ ছাড়া অন্যান্য ফসলের সঙ্গে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করা সম্ভব। মিষ্টি কুমড়া চাষে এলাকার কৃষকদের মধ্যে বেশ আগ্রহ বাড়ছে।

পাইকারি ক্রেতা আবু রায়হান জানান, চট্টগ্রাম শহরে মিষ্টি কুমড়ার বেশ চাহিদা রয়েছে। বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ ভালো। মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে বেশ লাভবান হওয়া যায়, তাই এই সময়ে আমরা মিষ্টি কুমড়ার সংগ্রহের জন্য পাহাড়ে চলে আসি।

পাইকারি বিক্রেতা মো. করিম বলেন, বান্দরবানের মিষ্টি কুমড়ার স্বাদ ও আকার ভালো। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এর চাহিদাও ব্যাপক। প্রতি বছর এ সময়টা আমরা এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ ও বিক্রি করার মধ্যদিয়ে কাটিয়ে দেই।

বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বান্দরবানে ২৪২ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ১৫৪ মেট্রিক টন মিষ্টি কুমড়ার উৎপাদন হয়। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে বান্দরবানে ২৪৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫১২ মেট্রিক টন।  

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পাহাড়ের মাটি আর আবহাওয়া মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য উপযোগী। তাই দিন দিন পার্বত্য জেলা বান্দরবানে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বাড়ছে। কৃষি বিভাগ এ আবাদে কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে।

বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, বান্দরবানের মিষ্টি কুমড়া দিন দিন বিভিন্ন স্থানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অনেক কষ্ট করে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেন, যা খেতে খুবই সুস্বাদু। মিষ্টি কুমড়া বর্তমানে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানা প্রান্তে সরবরাহ হচ্ছে এবং এতে কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ী উভয় পক্ষই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

রিজভী রাহাত/এসপি