দেড় বছর পর সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে আজ। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে স্কুল-কলেজ। অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তানিয়া তাবাসসুম বলেন, করোনাভাইরাসের জন্য অনেক দিন স্কুল বন্ধ ছিল। বহু প্রতীক্ষার পর আজ আমাদের স্কুল খুলেছে। এজন্য অনেক হ্যাপি লাগছে। নিয়মিত ক্লাস করতে পারব ভেবেই খুশি লাগছে।

কুষ্টিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা খাতুন বলেন, স্কুল খুলেছে। অনেক ভালো লাগছে। স্যার ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। খুবই ভালো লাগছে। 

কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র সিজান মাহমুদ সিয়াম। সে বলে, মনে হচ্ছে জেলখানা থেকে ছাড়া পেলাম। ঘরবন্দি জীবন কষ্টের ছিল। আজ আবারও স্কুলের চিরচেনা রূপ ফিরে পেয়েছি। গতকালের চেয়ে আজকের পৃথিবী বেশি সুখময়। স্কুল খোলার কারণে এখন থেকে বন্ধুদের সঙ্গে আগের মতো খেলাধুলা করতে পারব। স্কুল খোলায় খুব আনন্দ লাগছে। 

জিলা স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র রাফি বলেন, আমরা চাই নিয়মিত ক্লাস হোক। সরকার শর্ট সিলেবাস দিয়েছে সেগুলো সময়মতো সম্পন্ন করা হোক। তারপর পরীক্ষা হোক। বহুদিন পর স্কুল খোলার কারণে আজ আমাদের স্কুল প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মনে হচ্ছে, আমি একটি উৎসবে যুক্ত হয়েছি। 

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, পুলিশ লাইন স্কুলসহ শহরের বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা যায়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় দীর্ঘ দেড় বছর পর কুষ্টিয়ার স্কুল-কলেজগুলো খোলা হয়েছে। জিলা স্কুলের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের। সরকারি বালিকা বিদ্যালয় স্কুলের গেট সাজানো হয়েছে রং-বেরঙের বেলুন দিয়ে। ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। দীর্ঘ দিন পর চিরচেনা পরিবেশ ফিরে পাওয়ায় অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বইছে। স্কুলে-স্কুলে তৈরি হয়েছে মিলন মেলা। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কুষ্টিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ও নানা নির্দেশনা বাস্তবায়নে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রবেশ পথসহ বিভিন্ন জায়গায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ঝুলতে দেখা যায় করোনা থেকে সুরক্ষায় সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক নানা ফেস্টুন। শ্রেণিকক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। স্কুলে একটি কক্ষকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও আইসোলেশনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ দেখে সন্তুষ্ট শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

অভিভাবক নুরুল ইসলাম বলেন, ছেলে-মেয়েদের প্রথম দিনে স্কুলে যেতে যে আনন্দ, বাকি জীবন যেন এমন আনন্দ নিয়েই যায়। স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ায় সন্তানদের পাশাপাশি আমরাও খুশি। 

কুষ্টিয়া জেলা স্কুলের অফিস সহকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেড় বছর পর আমাদের স্কুল প্রাণ ফিরে পেয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা অলস সময় পার করেছি। এখন আবার ব্যস্ততা বেড়েছে। খুব ভালো লাগছে। 

পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের আয়া বেলি ও সুরাইয়া জানান, কয়েকদিন ধরে আমরা শ্রেণিকক্ষ ও স্কুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করেছি। আজ স্কুল খুলে দিয়েছে। আমাদের খুব ভালো লাগছে। ছাত্রছাত্রীরা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারবে। 

কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের পাশের শিঙাড়া, ছোলা, পিঁয়াজু, পুরি, সমুচা বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, স্কুল খুলে দিয়েছে। আশা করি ব্যবসা আগের মতো চলবে। ব্যবসায় লাভবান হতে পারব। 

রিকশাচালক সেলিম রেজা বলেন, স্কুল-কলেজ খোলা থাকলে আমাদের আয়-উপার্জন একটু ভালো হবে। আমরাও লকডাউনের মধ্যে খুব খারাপ সময় পার করেছি। আর করোনা আসার পর থেকে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় যাত্রীর অভাব ছিল। এখন থেকে তা পুষিয়ে নিতে পারব।

বাদাম বিক্রেতা মইদুল ইসলাম বলেন, বহু বছর ধরে স্কুল-কলেজের গেটে আমি বাদাম বিক্রি করি। কিন্তু করোনার কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ ছিল। এ জন্য আমার ব্যবসাও চলছিল না ঠিকমতো। স্কুল খুলে দেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ। 

কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. এফতে খাইরুল ইসলাম বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুল খুলেছি। আগে থেকেই আমাদের সকল প্রস্তুতি ছিল। আজ শিক্ষার্থীদের পদচারণায় স্কুলের প্রাণ ফিরেছে। শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্কুলে প্রবেশ করানো হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করানো হয়েছে। স্কুলে উৎসবের আমেজ বইছে। খুভ ভালো লাগছে।

কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহা. মোজাম্মেল হক বলেন, স্কুল খোলা উপলক্ষে স্কুলের গেটে রঙ-বেরঙের বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। সকল নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। 

কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসার জায়েদুর রহমান বলেন, জেলার সকল স্কুল-কলেজ দেড় বছর পর খোলা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুল কলেজ কর্তৃপক্ষকে সব ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সময়মতো তারা সেগুলো বাস্তবায়ন করেছে। আজ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের উপস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। স্কুলগুলো ডিসি স্যারকে সঙ্গে নিয়ে পরিদর্শন করে দেখছি। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।

এসপি