সারা দেশের মতো লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী শৌলমারী ও কালিকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলেছে আজ। তবে এ দুটো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত দূরের কথা, শিক্ষকরাই এসেছেন দেরি করে। এ অবস্থায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিজেদেরকেই শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করতে হয়েছে।  

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সামনে বই হাতে দাঁড়িয়ে আছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। তখনও স্কুলে কোনো শিক্ষক আসেননি। পরে দফতরির কাছ থেকে চাবি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে যায় শিক্ষার্থীরা। রুম খুলে দেখতে পায় ময়লা-আবর্জনা। অথচ স্কুল খোলার কয়েক দিন আগে বিদ্যালয়ের প্রাণ ফেরাতে ঝকঝকে করার নির্দেশ দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সেটি করেননি। উপায় না দেখে শিক্ষার্থীরা ঝাড়ু দিয়ে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার শুরু করে।

স্কুলে সাংবাদিক এসেছে এমন খবরে সকাল সাড়ে ১০টায় আসেন কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি মিজানুর রহমান। নিজের দোষ ঢাকতে চা-বিস্কুট খাওয়ার জন্য বলেন। পরে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে নিয়ে গাদাগাদি করে বসান। তখন ঘড়ির কাটায় ১১টা ০৫ মিনিট। তখনো কোনো শিক্ষক বিদ্যালয়ে উপস্থিত হননি। মুঠোফোন হাতে নিয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছেন দফতরি মিজানুর রহমান।

মিজানুর রহমান বলেন, স্যাররা মাঝে মাঝে আসেন না। তখন আমাকে ক্লাস নিতে হয়। যদিও দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে ক্লাস নিতে হচ্ছে না। স্যাররাও আর আসেন না।

কিছুক্ষণ পরই বিদ্যালয়ের মাঠে প্রবেশ করে একটি মোটরসাইকেল। সেটিতে করে এসেছেন তিন সহকারী শিক্ষকসহ প্রধান শিক্ষক সাখওয়াত হোসেন লাভলু।

প্রধান শিক্ষক সাখওয়াত হোসেন লাভলু বলেন, বন্যাকবলিত এলাকার কারণে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হয়। নৌকা ঘাটে দেরি হয়েছে। তাই বিদ্যালয়ে সঠিক সময় পৌঁছাতে পারিনি। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ক্লাস করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথম ক্লাসের কারণে শিক্ষার্থীদের বোঝানো সম্ভব হয়নি। কাল থেকে সবাইকে মাস্ক ও সাবান ব্যবহার করার জন্য বলা হবে।

ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিসকাত হোসেন বলেন, প্রায় দেড় বছর পর স্কুল খোলার সংবাদ শুনে সারা রাত ঘুমাইনি। কখন স্কুলে গিয়ে ক্লাস করব। কিন্তু সকাল ৯টায় স্কুলে আসার পর দেখি স্যাররা আসেননি। তাই ঝাড়ু নিয়ে শ্রেণিকক্ষসহ পুরো বিদ্যালয় পরিষ্কার করেছি।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন সরকার বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। অব্যশই দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রসাশক আবু জাফর বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা ঠিক হয়নি। এতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাবে। তাই তাদের বিরুদ্ধে অব্যশই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। না হলে চরাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা কখনোই ভালো হবে না।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/এসপি/জেএস