৫৪৩ দিন পর বরিশালের স্কুল-কলেজগুলোর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা বসতে পেরেছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সার্বিক প্রস্তুতি শেষে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) ক্লাস শুরু হয়। স্কুল-কলেজের গেটে শিক্ষার্থীর উপচে পড়া ভিড় ছিল। শ্রেণিকক্ষেও উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য।

নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই দেখা গেছে। শিক্ষকরা বলছেন, দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার কথা জানায় শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরা বলছেন, হাফ ছেড়ে বাঁচার গল্প।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বরিশাল থেকে জানানো হয়েছে, জেলায় মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে ৪২৬টি, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮২টি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে, জেলায় ১৫১৪ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বরিশাল অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ৪৭৪টি মাদরাসা রয়েছে। সরকার নির্ধারিত দিনে এই ২ হাজার ৪৯৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। তবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশানুরুপ শিক্ষার্থী ছিল না।

পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বরিশালের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস। তিনি বলেন, সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আমি বরিশালের ৬টি স্কুল-কলেজ পরিদর্শন করেছি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

নগরীর নূরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে যেসব নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। আপনারা জানেন এখনো কিন্তু মৃত্যুর হার কম না। ফলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত রাখতে যা দরকার আমরা সেসব করছি।

ওই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার খুব ভালো লাগছে শিক্ষার্থীদের সরাসরি কাছে পেয়ে। কক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আমাকে অভিভূত করেছে। আমি কোনদিন চাইব না আর যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হোক।

আলেকান্দা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অশোক কুমার ব্রহ্মচারী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ তিনি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আমারা চেষ্টা করেছি সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের। কলেজ কম্পাউন্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি। শিক্ষার্থীদের সারিবদ্ধভাবে কলেজে প্রবেশ করিয়েছি।

এইচএসসি পরীক্ষার্থী তারিকুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, আমরা আজকে অবশেষে ক্লাসে আসতে পারলাম। দীর্ঘ দেড় বছর পরে ক্লাসে ঢুকতে পারার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।

একাদশ মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী মহুয়া আক্তার রিমা বলেন, আমি ক্লাস যেমন মিস করেছি তেমনি বন্ধুদেরও মিস করেছি। আজ ক্লাসে আসতে পেরে তাদের কাছে পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। লেখাপড়ার ক্ষতি হলেও কিছু করার নেই। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পরিশ্রম করতে হবে।

অভিভাবক রাবেয়া আক্তার বলেন, করোনার সময়ে ছেলেমেয়েদের সামলাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। তাদের ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখাটা দুঃসাধ্য। তবে সেটি করতে হয়েছে। এখন মেয়েকে কলেজে নিয়ে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আমি চাইব না কখনোই যেন স্কুল-কলেজ বন্ধ না হয়।

অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, খুব ভালো লাগছে শিক্ষার্থীদের কলেজে পেয়ে। এতদিন আমি অফিস করেছি। তখন মরা মরা মনে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যখন এলো তখন মনে হয়েছে মরা গাঙে জোয়ার এসেছে।

সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, অমৃত লাল দে কলেজ, সরকারি বরিশাল কলেজ, বরিশাল সিটি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, জিলা স্কুল, মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঘুরে দেখা গেছে নির্ধারিত সময়ে ক্লাস শুরু হয়েছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএসআর