সরকারি ও বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিটসমূহে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় এবার জাতীয় মেধা তালিকায় দেশসেরা হয়েছেন পঞ্চগড়ের নাজমুস সাকিব রাহাত। তার সর্বমোট স্কোর ২৯৫।  

এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ রাহাত ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ৯৫। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর)  দুপুরে প্রকাশ হওয়া ফলাফলে এ তথ্য জানা যায়। 

জানা গেছে, নাজমুস সাকিব রাহাতের বাড়ি জেলার সদর উপজেলার চাকলারহাট ইউনিয়নের শিং রোড রতনী বাড়ি এলাকায়। তিনি ওই এলাকার সোলেমান আলীর ছোট ছেলে। 

নাজমুস সাকিব রাহাত ২০১৮ সালে পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২০ সালে সেন্ট জোসেফ সেকেন্ডারি স্কুল থেকে এইচএসসি পাস করেন। 

নাজমুস সাকিব  রাহাত বলেন, সৃষ্টিকর্তার রহমতে বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজন এবং শিক্ষকদের অনেক অবদান রয়েছে আমার এত দূর যাওয়ার পেছনে। সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট পেয়েছি আমার বড় ভাই ইব্রাহিম খলিলের কাছ থেকে। 

রাহাত বলেন, আমি আগে থেকে নিজেকে একজন চিকিৎসক হিসেবে মানবতার সেবক হিসেবে দেখতে চেয়েছিলাম। আমার স্বপ্ন ছিল একজন চিকিৎসক হয়ে সমাজের গরিব, দুঃখী ও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াব। এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতেও অংশ নিয়েছিলাম। মাত্র এক নম্বর কম পাওয়ায় সেখানে ভর্তির সুযোগ পায়নি। 

ডেন্টালে দেশসেরা হতে পারলেও মেডিকেলে চান্স কেন হল না এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাহাত ঢাকা পোস্টকে একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জানতে পেরে আমি পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে যাই। সেখান থেকে আমি আমার মেসে ফেরার সময় একটি বাসে উঠি। বাসের একটি সিটে একজন বৃদ্ধ বসে আছেন। কেউ ওনার পাশে বসছেন না। আমি কিছু না ভেবেই সেই বৃদ্ধের পাশে গিয়ে বসি। 

একটু পর বাসের সহকারী ভাড়ার জন্য এলে বৃদ্ধ কেঁদে ফেলে। পরে আমি কান্না কারণ জানতে চাইলে বৃদ্ধ জানায়, তার বাড়ি বরিশালে। ঢাকায় একটি বাড়িতে দারোয়ানের কাজ করতেন। কিছু দিন আগে তাকে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তার সব দাঁত নড়বড়ে হয়ে গেছে। চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। ১২৮ টাকার জন্য চিকিৎসা না দিয়েই তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাহাত বলেন, বৃদ্ধের কথা শুনে আমার খুব খারাপ লেগেছিল। রুমে এলাম। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালোই চলছিল। কিন্তু পরীক্ষার পাঁচদিন আগে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। অসুস্থতা খুব বেশি না হলেও কেন যেন পড়ালেখা করতে পারছিলাম না। ওভাবেই পরীক্ষা দেই।মাত্র এক মার্ক কম পাওয়ায় মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ হারাই। যখন মেডিকেলে সুযোগ পেলাম না তখন ভেঙে পড়েছিলাম। 

হঠাৎ করে ওই বৃদ্ধের কথা মনে পড়ে গেল। তখন ভাবতে লাগলাম, ওই বৃদ্ধ কী চেয়েছিল আমি দাঁতের ডাক্তার হই? যার জন্য মেডিকেলে হলো না। পরে আমি ডেন্টালের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। সর্বশেষ এই সাফল্য। আমি ডাক্তার হয়ে এমন গরিব ও অসহায় মানুষদের সেবা করতে চাই।

নাজমুস সাকিব রাহাতের বড় ভাই মাদরাসাশিক্ষক ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমার ছোট ভাই রাহাত ছোটবেলা থেকেই অনেক মেধাবী। সে অনেক ভদ্র ও বিনয়ী ছাত্র ছিল। আমি ভাইয়ের পাশাপাশি তার শিক্ষক। আমাদের স্বপ্ন ছিল রাহাতকে চিকিৎসক বানাব। সেভাবেই ওকে সব সময় সাপোর্ট দিয়েছি। এখন স্বপ্ন পূরণের জন্য সকলের দোয়া চাই। সে যেন বড় হয়ে অনেক বড় চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে পারে।

রনি মিয়াজী/এসপি