করোনার প্রাদুর্ভাবের পরপরই শুরু হয় বন্যা। তাতে বিভিন্ন পেশার লোকজনের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অনেকেই ভিন্ন কিছু করলেও বিপাকে পড়েছেন সার্কাসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পোষা হাতি ভাড়া দেওয়া হাতির মালিকরা। এতদিন হাতির ভাড়া থেকে চলত সংসার খরচ ও হাতির খাদ্য খরচ।

কিন্তু দীর্ঘদিন সার্কাস পার্টি বন্ধ থাকায় দুবেলা খাবারও জুটছে না তাদের। তাই বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে হাতি-ঘোড়াসহ পোষা অনেক জীবজন্তু। ফলে বাধ্য হয়ে হাতির মালিকরা নেমেছেন মহাসড়কে। তারা হাতি নিয়ে পথচারীসহ যানবাহনের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন।

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজবাড়ী শহরের বিভিন্ন সড়কে দেখা যায়, হাতি দিয়ে গাড়ি থামিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা। এ সময় পথচারী, যানবাহনের যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা টাকা দিলেও অনেকে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তবে হাতির মালিকরা পেটের দায়ে রাস্তায় নামেন বললেও জনগণ এটাকে একপ্রকার চাঁদাবাজি হিসেবে দেখছে।

দেখা যায়, বড় একটি হাতি মহাসড়ক দিয়ে হাঁটছে। হাতির পিঠে বসে আছেন রাজু নামের এক মাহুত। তিনি হাতিটির মালিক। পাকা সড়ক ধরে শুঁড় উঁচু করে হেলেদুলে চলছে হাতিটি। এ সময় যানবাহন দেখলেই শুঁড় উঁচু করে সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। টাকা না দেওয়া পর্যন্ত গাড়ি ও পথচারীকে ছাড়ছে না হাতিটি। এতে যাত্রী ও চালকদের কেউ টাকা দিচ্ছেন, কেউ হচ্ছেন বিরক্ত। আবার যানবাহন থামিয়ে দেওয়ায় দুর্ভোগেরও শিকার হয় সাধারণ মানুষ।

পথচারী আজিজ মন্ডল বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম। পথে হাতি সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর শুঁড় উঁচু করে টাকা চায়। টাকা না দিতেই হাতি হুংকার শুরু করে। শুঁড় উঁচু করে সামনের দিকে তেড়ে আসে। পরে ১০ টাকা দিতেই শুঁড় নামায়।

অটোরিকশার যাত্রী শহিদুল ইসলাম বলেন, অটো নিয়ে যেতেই বড় একটি হাতি সামনে এসে দাঁড়িয়ে শুঁড় দিয়ে চেপে ধরেছে। কারণ, হাতিকে ১০ টাকা করে দিতে হবে। কম দিলে তা গ্রহণ করছে না। পরে ১০ টাকা দিলে হাতিটি তার মাহুতের কাছে টাকা দিয়ে দেয়।

সদর উপজেলার উড়াকান্দা এলকার ব্যবসায়ি রশিদ মন্ডল জানান, সকালে দোকান খোলার কিছুক্ষণ পরই একটি বিশাল আকৃতির হাতি আসে। দোকানের মধ্যে শুঁড় ঢুকিয়ে দিয়ে টাকা চায়। পরে ১০ টাকা দিলে চলে যায়।

তবে একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, হাতি দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালে ক্রেতারা ভয়ে দোকানে ঢুকতে সাহস পান না। বিড়ম্বনা এড়াতে দোকানমালিকরা বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে দেন। যাতে হাতি তাড়াতাড়ি দোকানের সামনে থেকে চলে যায়। তারা এতে বিরক্ত হচ্ছেন।

হাতির মালিক ও মাহুত রাজুকে জিজ্ঞেস করা হয় পথচারীদের কাছ থেকে কেন টাকা নিচ্ছেন? উত্তরে তিনি বলেন, সবাই খুশি হয়ে দিচ্ছে, তাই নিচ্ছি। এটা চাঁদাবাজি বলা চলে না। করোনার কারণে দীর্ঘদিন সার্কাস ও যাত্রাপালা বন্ধ। আয়-রোজগারও নেই। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামি। পথচারী, যাত্রী, যানবাহন ও দোকান থেকে টাকা তুলি। অন্য কোনো পেশা নেই। হাতি দিয়ে দৈনিক দুই হাজার টাকার মতো আয় হয়। তা দিয়ে হাতির খাবার ও নিজের খরচ চালাই।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহাসড়কে হাতি চাঁদাবাজি করে, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।

মীর সামসুজ্জামান/এনএ