কন্যামতি আকবর হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা নদীভাঙনে বিলীন হওয়ায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা। পাশের বাড়িতে রাখা হয় স্কুলের ইট-টিন।

সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ৫ দিন অতিবাহিত হলেও পাঠদান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর নারায়ণপুর ইউনিয়নের কন্যামতি আকবর হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। 

নদীভাঙনের শিকার বিদ্যালয়টির একটি টিনশেড ঘর থাকলেও সেটিও পাঠদানের উপযোগী করা হয়নি। ফলে পাঠদান না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে বিদ্যালয়টির ২৮৫ শিক্ষার্থী। কবে নাগাদ পাঠদান শুরু হবে জানেন না শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়হীন এলাকায় সরকারের ১৫০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১৭ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০১১-১২ অর্থবছরে আধাপাকা একটি ভবন নির্মাণ করে।

ভবনটি গঙ্গাধর নদের ভাঙনের মুখে পড়ায় তিন মাস আগে টিন, ইট খুলে স্থানীয় লালচান মিয়ার বাড়িতে রাখা হয়। লালচান মিয়ার বাড়ির পাশেই একটি নিচু জমিতে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানোর জন্য একটি টিনশেড ঘর তোলা হয়।

সে ঘরে রাখা হয় পুরাতন ভবনের জানালা, দরজা, কাঠ, টিন, ইটসহ নানা সরঞ্জাম। বিদ্যালয়ের চেয়ার, বেঞ্চ, সাইনবোর্ডসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রাখা হয় গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে। ফলে সেখানে নেই বিকল্প উপায়ে পাঠদানের জন্য কোনো উপযোগী স্থান বা কক্ষ। 

করোনায় দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকার পর এখন পাঠদান না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে ২৮৫ শিক্ষার্থী। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, খোলার সংবাদে আমরা স্কুলে যাই কিন্তু স্কুলে দাঁড়ানোর মতো পরিবেশ নেই। একটি ঘর আছে সেখানে জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। কবে স্কুল ঠিক করা হবে আমরা জানি না।

লালচান মিয়া জানান, স্কুলের জায়গা নদীভাঙনে বিলীন হওয়ায় স্কুল তোলার জন্য আমি জায়গা দিয়েছি। তবে স্থানটি নিচু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে গিয়ে লেখাপড়ার পরিবেশ থাকে না। ফলে এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে।

আকবর হোসেন প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানান, ভেঙে যাওয়া বিদ্যালয়ের টিন দিয়ে ঘর তোলা হচ্ছে। সেখানেই পাঠদান শুরু করা হবে। মাঠে কাঁদাপানি থাকলেও দু-তিন দিনের মধ্যে শুকিয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসার জন্য মাইকিংও করা হচ্ছে।

উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নওশাদ আলী জানান, বিদ্যায়টি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার পর একটি স্থানে ঘর তোলা হয়েছে। বন্যা এবং বৃষ্টির পানিতে মাঠসহ ঘরের মেঝে ডুবে থাকায় ১২ তারিখে পাঠদান শুরু করা সম্ভব হয়নি।

নাগেশ্বরী উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান জানান, বিদ্যালয়টি সচল রাখতে পুরাতন টিন দিয়ে একটি ঘর তৈরি করতে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ থেকে ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পাঠদানের জন্য বিদ্যালয়টি পুরোপুরি প্রস্তুত করা হবে।

জুয়েল রানা/এমএসআর