মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) রাজশাহী আঞ্চলিক পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও সহকারী প্রোগ্রামারের নামে মানহানিকর সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায়  ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ‘বাংলাদেশের আলো’ নামের পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক মফিজুর রহমান এবং রাজশাহীর রিপোর্টার ও ব্যুরো প্রধান ফারুক আহম্মেদকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। 

গত ৮ সেপ্টেম্বর মাউশির রাজশাহীর আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর ড. কামাল হোসেন, সহকারী পরিচালক ড. আবু রেজা আজাদ এবং সহকারী প্রোগ্রামার ডলি রানী পালের পক্ষে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান রাজশাহী জজ কোর্টের আইনজীবী এজাজুল হক মানু। ওই দিনই রেজিস্ট্রি ডাক যোগে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।

মিথ্যা, বিদ্বেষপূর্ণ ও মানহানিকর খবর পরিবেশন, মুদ্রণ ও প্রকাশ করায় কেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতে মামলা করা যাবে না তা লিগ্যাল নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে আইনজীবীকে জানাতে বলা হয়েছে।

ওই লিগ্যাল নোটিশে আইনজীবী উল্লেখ করেন, আমার মক্কেল প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত পদস্থ কর্মকর্তা এবং সম্মানিত ব্যক্তি। প্রফেসর ড. কামাল হোসেন এবং ড. আবু রেজা আজাদ উভয়েই পিএইচডি এবং ডলি রানী পাল স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। প্রফেসর ড. কামাল হোসেন এবং ড. আবু রেজা আজাদ উভয়েই সরকারি কলেজের শিক্ষক এবং ডলি রানী পাল মাউশি রাজশাহী দফতরে কর্মরত। তারা সকলেই সৎ, দক্ষ এবং নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা।

ড. কামাল হোসেন ও ড. আবু রেজা আজাদ শিক্ষকতা পেশায় সুখ্যাতি অর্জন করায় সরকার তাদের প্রতি প্রীত হয়ে যথাক্রমে পরিচালক ও সহকারী পরিচালক পদে প্রেষণে নিয়োগ দেন। নিয়োগপ্রাপ্তির পর থেকেই তারা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অন্যায় ও বেআইনি সুবিধা প্রত্যাশী অনেকেই তাদের আইনানুগ সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ। তারাই আমার মক্কেলগণের সুনাম-সুখ্যাতি বিনষ্টের ব্যাপারে সদা তৎপর।

তাদের দ্বারা প্ররোচিত ও প্রভাবিত হয়ে গত ২৫ আগস্ট আপনাদের প্রকাশিত ও প্রচারিত বাংলাদেশের আলো পত্রিকায় ‘রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষাভবনে অনিয়ম’ শিরোনামে সংবাদ ছাপিয়েছেন। তাতে উল্লেখ রয়েছে- ‘কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সকল অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এসব অনিয়ম আর দুর্নীতি যেন দেখার কেউ নেই। প্রতিটি ফাইল বিনা কারণে করা হয় রিজেক্ট। উৎকোচ দিলে ফাইল রিজেক্ট হয় না। দফতরটির সকল ফাইল পাস হয় তিনজনের নেতৃত্বে। প্রতিটি ফাইলের টাকা লেনদেন হয় সহকারী প্রোগ্রামার ডলি রানী পালের মাধ্যমে।’

এই সংবাদ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা ছাড়া কিছুই নয়। উক্ত সংবাদ কুরুচিপূর্ণ বিদ্বেষপ্রসূত এবং আমার মক্কেলদের মান-সম্মান বিনষ্টের উদ্দেশ্যে পরিবেশিত, মুদ্রিত এবং প্রকাশিত হয়েছে। আপনারা আমার মক্কেলগণের শত্রুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাদেরকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার হীন উদ্দেশ্যে এই খবর পরিবেশন, মুদ্রণ এবং প্রকাশ করেছেন।

আইনজীবী এজাজুল হক মানু জানান, তারা বিধি মেনে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। মিথ্যা, বিদ্বেষপূর্ণ ও মানহানিকর খবর পরিবেশন, মুদ্রণ ও প্রকাশ করায় তাদের বিরুদ্ধে কেন ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতে মামলা-মোকদ্দমা করা যাবে না তা লিগ্যাল নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে আইনজীবীকে জানাতে বলা হয়েছে। জবাব প্রাপ্তি সাপেক্ষে তারা আইনি ব্যবস্থা নেবেন। 

এ বিষয়ে মাউশির রাজশাহীর আঞ্চলিক পরিচালক ড. কামাল হোসেন জানান, এমপিও আবেদন হয় শতভাগ অনলাইনে। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর সহকারী পরিচালক (কলেজ) ও উপপরিচালক (কলেজ) মতামত দিয়ে থাকেন। সহকারী পরিচালক ও উপপরিচালকের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালক পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধান্ত দেন। জনবল কাঠামো, প্রচলিত আইন ও নীতিমালা মেনেই এমপিও আবেদন নিষ্পত্তি হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিবার এমপিও শুরুর পর একটি চক্র এমপিও নিয়ে তদবির শুরু করে। চর্তুমুখি চাপ উপেক্ষা করেই নীতিমালা মেনে এমপিও আবেদন নিষ্পত্তি করেন তারা। আর এতে ক্ষিপ্ত হন তদবিরকারীরা। নানা কায়দায় এমপিও কার্যক্রম নিয়ে অপপ্রচার চলে। এতে সরাসরি যুক্ত আঞ্চলিক দফতরের কতিপয় কর্মকর্তা। এতে মানসিক চাপ বাড়ে। ব্যাহত হয় দফতরের কর্ম পরিবেশ। এমপিও কার্যক্রমসহ সরকারের কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়। দিন দিন এই চাপ বাড়ছে। এর প্রতিকার জরুরি। বিষয়টি তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছেন। সম্প্রতি এমপিও নিয়ে ভিত্তিহীন ও মানহানিকর সংবাদ প্রকাশের জেরে বোয়ালিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে। 

ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর