বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ইউপি চেয়ারম্যান এ এম রফিকুল্লাহ

সরকারি জমি দখল ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ইউপি চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত ও হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজুর বিরুদ্ধে। 

শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়নের একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাতে ওই মুক্তিযোদ্ধা সাবেক এমপি আরজু ও তার তিন সহযোগীর নাম উল্লেখ করে আমিনপুর থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। 

ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা এ এম রফিকুল্লাহ বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। 

মুক্তিযোদ্ধা এ এম রফিকুল্লাহ জানান, শুক্রবার দুপুরে বক্তারপুর গ্রামের আব্দুল মতীনের বাড়িতে একটি কুলখানির অনুষ্ঠান ছিল। দুপুর আড়াইটার পরপরই পাবনা-২ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু ১০-১২ জন অনুসারীকে নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে আসেন। অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিতির খবর পেয়েই বিষোদগার করে শ্লোগান দিতে শুরু করেন। 

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমি ওই বাড়ির একটি কক্ষে আশ্রয় নেই। কিছুক্ষণ পর তিনি ওই ঘরে ঢুকে আমাকে অবৈধ এমপি বাজার বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। এ সময় উপস্থিত লোকজন আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি স্মরণ করে দিলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা নিয়েও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এ সময় আমাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকিও দেন। উপস্থিত লোকজন সাবেক এমপির এমন আচরণে অবাক হয়ে যান। তারা আমাকে শান্ত্বনা দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন।

চেয়ারম্যান রফিকুল্লাহ আরও জানান, সাবেক এমপি আরজু নগরবাড়ী এলাকায় আট একর সরকারি জমি দখল করে নিজের নামে অবৈধ মার্কেট গড়েছেন। তার এই অপকর্মের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তার অনুসারী অবৈধ অস্ত্রধারী চরমপন্থি ও সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রশাসনের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় ডায়েরি করেছি। পাশাপাশি বিষয়টি স্থানীয় এমপি আহমেদ ফিরোজ কবিরসহ দলীয় নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছি।  

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একজন সাবেক এমপির এমন মারমুখী আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চেয়ারম্যান এএম রফিকুল্লাহকে অপদস্থ করার পরও তিনি অসীম ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে এলাকায় অস্থিতিশীল পরিবেশ তিরির অপচেষ্টাও করছেন সাবেক এ এমপি। 

পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে এমন অশোভন আচরণ করতে পারেন না। এটি দুঃখজনক ও লজ্জার। সাবেক এমপি হিসেবে অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। আমার মনে হয়েছে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করা হবে। 

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা খ ম হাসান কবির আরিফ বলেন, সাবেক এমপি আরজু এক সময়ে জাসদ গণবাহিনীর সন্ত্রাসী ছিলেন। পরে হাওয়া ভবনে বিএনপির দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন। কিভাবে তিনি আওয়ামী লীগের নেতা ও এমপি হয়েছেন, তা তদন্ত হওয়া দরকার। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মুত্তিযোদ্ধাদের অপদস্ত করায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি বিচার দাবি করছি। 

পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি বলেন, সাবেক এমপি আরজু মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিষোদগার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। আমি তার ধৃষ্ঠতাপূর্ণ আচরণের শাস্তি দাবি করছি। 

পাবনা-২ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুল হক আরজু বলেন, চেয়ারম্যান রফিকুল্লাহকে লাঞ্ছিত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কথিত এমপি বাজার নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে মাত্র। মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে কটূক্তি বা তাকে হত্যার হুমকির বিষয়টি সত্য নয়। 

আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী ঢাকা পোস্টকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ এম রফিকুল্লাহর অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাকিব হাসনাত/এসপি