সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোশাক কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। বিভিন্ন অফার ও চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে পোশাক অর্ডার করে প্রতারিত হচ্ছেন তারা। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অধিকাংশই নারী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নামে-বেনামে খোলা হয়েছে পেজ। এসব পেজের মূল টার্গেটই হচ্ছেন নারী। নানা অফার ও চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে তারা। সামাজিক মাধ্যমের এসব পেজের দায়বদ্ধতা না থাকায় প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। এসব পেজের মাধ্যমে কেনাকাটায় আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে একাধিক চক্র। চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে তরুণীদের আকৃষ্ট করে তারা। এই ফাঁদে পা দেন তরুণীরা।

‘নিউ লেহেঙ্গা বাজার’ নামে একটি ফেসবুক পেজে ০৭ কোডের লাল রঙের একটি লেহেঙ্গা অর্ডার করেন মানসুরা সারাহ। ৩০ মার্চ অর্ডার কনফার্ম করেন তিনি। লেহেঙ্গার দাম ১৬০০ টাকা ও ডেলিভারি চার্জ বাবদ আরও ১৫০ টাকা এসএ পরিবহনে টাকা পেমেন্ট করেন মানসুরা। কিন্তু পার্সেলটি হাতে পাওয়ার পর প্যাকেট খুলে প্রত্যাশিত পণ্য পাননি তিনি।

মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মানসুরা সারাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘নিউ লেহেঙ্গা বাজার’ নামে পেজে একটি লেহেঙ্গা পছন্দ হয়। আমি তাদের ইনবক্সে দাম জিজ্ঞাসা করলে তারা ১৬০০ টাকা চায়। এরপর তারা আমার ঠিকানা নিয়ে অর্ডার কনফার্ম করার জন্য বলে। আমি পর দিন অর্ডার কনফার্ম করি। এরপর অর্ডার এসএ পরিবহনে আসে। আমি টাকা পেমেন্ট করে প্যাকেট খুলে দেখি, আমি যে লেহেঙ্গা অর্ডার দিয়েছি সেটা নয়। একটা নিম্নমানের শাড়ি এসেছে। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগ দিলে তারা জানায়, ভুলবশত এটা হয়েছে। এরপর আমি তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা আর আমার লেহেঙ্গাটি পাঠায়নি।

জারা কালেকশন নামে একটি ফেসবুক পেজে ড্রেস অর্ডার করেন মৌলভীবাজার শহরের মুসলিম কোয়ার্টার এলাকার মহসিনা রহমান সাকি। তিনিও একইভাবে প্রতারণার শিকার হন।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি জারা কালেকশনে দুইটি ড্রেস অর্ডার করি। একেকটির দাম ১১০০ টাকা করে। দুই দিন পর অর্ডার এসএ পরিবহনে আসে। টাকা পেমেন্ট করে পার্সেল রিসিভের পর দেখতে পাই, অন্য আরেকটি নিম্নমানের ড্রেস পাঠিয়েছে। যার দাম সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা হবে। পরে একাধিকবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও আমার প্রত্যাশিত ড্রেসটি ফিরে পাইনি।

‘নিউ লেহেঙ্গা বাজার’ পেজের মামুন বলেন, ‘আমি বিষয়টি দেখে জানাব’। এরপর পেজে উল্লেখিত নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তা রিসিভ করা হয়নি। একইভাবে জারা কালেকশনও ফোন ধরেনি।

রোস পেটাসের উদ্যোক্তা তানজিনা আক্তার রেশমি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যবসায় সততার বিকল্প নেই। কিন্তু অনেক অসৎ ব্যবসায়ী এইভাবে প্রতারণা করে আসছে। এসব প্রতারক পেজের কারণে অনলাইনের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে। প্রতারকদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা নেওয়া হতো তাহলে মানুষের আরও আগ্রহ বাড়ত। ফেসবুক হতে পারত বাণিজ্যের নতুন দ্বার।

এ বিষয়ে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের উপ-পরিদর্শক আতিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাইবার পুলিশ সেন্টার, সিআইডি, বাংলাদেশ পুলিশ নামে ফেসবুকে যেসব পেজ আছে সেগুলো অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব। সাইবার অপরাধ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

ওমর ফারুক নাঈম/এসকেডি