পরিবারের হেফাজতে থাকা শর্তে শিশুদের হাতে ‘মনীষীদের জীবনী’ বই তুলে দেওয়া হয়

সুনামগঞ্জে নানা অভিযোগে পৃথক ৩৫টি মামলায় আসামি ছিল ৪৯ শিশু। নিয়ম অনুযায়ী এসব মামলার রায়ে তাদের প্রত্যেকের সাজা হওয়ার কথা ছিল। শিশুদের আদালতে নিয়মিত হাজিরা থেকে মুক্তি দিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সংশোধনের শর্তে সব মামলা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পর আদালতের কর্মীরা শিশুদের হাতে ‘মনীষীদের জীবনী’ বই তুলে দেন।

এ রকম রায় প্রকাশের পর সুনামগঞ্জের মানুষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিচার বিভাগকে। তারা বলছেন, অপরাধীদের সাজা দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো সংশোধিত হওয়া। শিশু অবস্থায় তাদের সাজা হলে তাদের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ত। এখন পরিবারের সঙ্গে থেকে নিজেদের সংশোধন করবে এই শিশুরা।

এই রায়ে ৪৯ শিশু এখন নিজ বাড়িতে তাদের মা-বাবার জিম্মায় সংশোধিত হবে। এই সময়কালে তাদের ১০টি শর্ত পালন করতে হবে। শর্ত পালনের বিষয়টি তত্ত্বাবধান করবেন জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমান।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন বুধবার দুপুরে আসামি, তাদের অভিভাবক ও আইনজীবীদের উপস্থিতিতে এসব মামলায় ব্যতিক্রমী রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে সব শিশুর মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজন উপস্থিত ছিলেন।

রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট নান্টু রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালত ৩৫ শিশুর অপরাধ মামলায় একসঙ্গে যুগান্তকারী একটি রায় দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, প্রবেশনের সময় অপরাধে জড়িত শিশুরা মা-বাবার আদেশ-নির্দেশ মেনে চলা ও মা-বাবার সেবা-যত্ন করতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মানা ও ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতে হবে। প্রত্যেকে কমপক্ষে ২০টি করে গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করতে হবে। অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। ভবিষ্যতে কোনো অপরাধের সঙ্গে নিজেকে জড়াতে পারবে না।

প্রবেশনকালে এই শিশুরা শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করছে কি না, সেটির তত্ত্বাবধান করা আমার দায়িত্ব। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও দায়িত্ব রয়েছে এসব শর্ত পালনে তাদের সহযোগিতা করা, পাশে থাকা। তিন মাস পরপর আদালতে এই বিষয়ে আমাকে প্রতিবেদন দিতে হবে।

শাহ মো. শফিউর রহমান, জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা

শিশুদের নিয়ে এমন রায় দেওয়ার সময় আদালত উল্লেখ করেছেন, এই রায়ের ফলে ছোটখাটো অনেক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হলো। শিশুরা তাদের আপন ঠিকানা ফিরে পেল। মা-বাবার দুশ্চিন্তার অবসান হলো এবং তারা তাদের আদরের সন্তানকে নিজের কাছে রেখে সংশোধনের সুযোগ পেলেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রবেশনে দেওয়া এসব শিশুর বিরুদ্ধে মারামারিসহ সাধারণ অভিযোগ ছিল।

গণমাধ্যমকর্মী আকরাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই শিশুদের জীবনে অনেক কিছু দেখার বাকি রয়েছে। কিন্তু জীবনের শুরুতেই ভুল করেছে। সে ভুল সংশোধনের জন্য আজ আদালত যে রায় দিয়েছেন, তা যুগান্তরকারী। এই শিশুরা সংশোধিত হবে বলে আশা করেন এই গণমাধ্যমকর্মী।

জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, প্রবেশনকালে এই শিশুরা শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করছে কি না, সেটির তত্ত্বাবধান করা আমার দায়িত্ব। পাশাপাশি অভিভাবকদেরও দায়িত্ব রয়েছে এসব শর্ত পালনে তাদের সহযোগিতা করা, পাশে থাকা। তিন মাস পরপর আদালতে এই বিষয়ে আমাকে প্রতিবেদন দিতে হবে।

এনএ