ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলায় প্রাইভেটকারে চড়ে প্রথমে নতুন ইজিবাইক টার্গেট করা হতো। এরপর অভিনব কায়দায় টার্গেট করা ইজিবাইক ছিনতাই করতো চক্রটি। এদের মধ্যে রয়েছে ছিনতাই ও বিক্রির আলাদা আলাদা টিম। এমন একটি চক্রের মূল হোতাসহ পাঁচজনকে আটক করেছে র‌্যাব-৩। এ ঘটনায় ১৮টি চোরাই ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকার বিভিন্ন ইজিবাইক গ্যারেজে অভিযান পরিচালনা করে তাদের আটক করা হয়। এদের মধ্যে মূলহোতা মোস্তফাকে উত্তরা থেকে আটক করা হয়।

আটকরা হলেন- লালমনিরহাটের মো. বশির আহম্মদ (৪০), কিশোরগঞ্জের মো. মোস্তফা কামাল (৪৯), লালমনিরহাটের মো. জিয়াউর রহমান (২৭), দিনাজপুরের মো. জলিল (৩২) ও নড়াইলের মো. ওসমান শেখ (৩১)। 

চক্রটির মূল হোতা বশির। তিনি ইজিবাইক চুরি ও ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারী। গ্রেফতার মোস্তফা প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস সরবরাহ করতেন। জিয়া মোবাইল ফোনে কথা বলার অভিনয় করতেন। জলিল ও ওসমান ইজিবাইক চালিয়ে গ্যারেজে পৌঁছে দিতেন। এসব চোরাই ও ছিনতাইকৃত ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক বিভিন্ন গ্যারেজে এনে লুকিয়ে রাখতেন তারা। 

র‌্যাব জানায়, চক্রটি অভিনব কায়দায় ইজিবাইক চুরি করতো। তারা প্রথমে প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাসযোগে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলায় গিয়ে নতুন ইজিবাইকের ওপর নজরদারি করতো। তারপর ইজিবাইকের সামনে গিয়ে একজন ইজিবাইকের ড্রাইভারকে শুনিয়ে উচ্চস্বরে মোবাইলে বলতো ‘আম্মা হাসপাতালে ভর্তি, মাঝ পথে গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেল, কীভাবে আম্মার কাছে পৌঁছাবো। আম্মাকে গিয়ে জীবিত পাব কিনা জানি না।’ তখন অপর প্রান্ত থেকে বলত, একটা ইজিবাইক নিয়ে চলে আয়। তারপর তারা ইজিবাইকের ড্রাইভারকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুনয় বিনয় করতো। এরপর ইজিবাইক যাত্রা শুরু করার কিছুক্ষণ পর তারা জানাতো, তাদের কিছু জরুরি কাগজপত্র গাড়িতে রয়ে গেছে। ইজিবাইকের ড্রাইভারকে উক্ত কাগজ গাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করতো। এরপর ইজিবাইকের ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে গেলে আসামিরা ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যেতো।  

এছাড়াও চক্রটি বিভিন্ন সময় ইজিবাইক ভাড়া করে নির্জন স্থানে গিয়ে কখনও চালকের হাত-পা বেঁধে, আবার কখনও চালককে অজ্ঞান করে তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে তার ইজিবাইক ছিনতাই করতো। পরে নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আশুলিয়ার ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রকিবুল হাসান রকিব বলেন,  চক্রের মূলহোতা বশির ও তার অন্যতম সহযোগী জিয়ার সহায়তায় চোরাই ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের রং, সিট কভার পরিবর্তন করে একটি বাম্পার লাগিয়ে বিভিন্ন লোকজনের কাছে বাজার দামের অর্ধেক দামে বিক্রি করে দিতেন। এভাবে তারা টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে গত ৩ বছরে ৫ শতাধিক ইজিবাইক চুরি ও ছিনতাই করে ইজিবাইক মালিকদের সর্বস্বান্ত করেছে। আটকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিকেলে আশুলিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

মাহিদুল মাহিদ/আরএআর