মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ পুকুর গেল বন্যার পানিতে ডুবে যায়। এতে পুকুরের মাছ ও রেণু পানিতে ভেসে যায়। বন্যার পানি কমার পরে সামনে আসে ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ। চলতি বছরের বন্যায় জেলায় মৎস্য খাতে রেণু, মাছ ও পুকুরের অবকাঠামো মিলে ২ কোটি ১৭ লাখ ৩৯ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

বন্যায় একদিকে যেমন নতুন ও পুরাতন মৎস্য খামারিরা পড়েছেন বিপাকে। অন্যদিকে অনেক খামারিকে গুনতে হচ্ছে লোকসানও। নতুন করে মৎস্য খামারে বিনিয়োগ করতেও অনীহা প্রকাশ করছেন অনেক খামারিরা। মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মানিকগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুর রহমান মুঠোফোনে এ তথ্য জানান।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার সাতটি উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যায় বড় ও ছোট আকারের মাছ, রেণু পোনা এবং পুকুরের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এরমধ্যে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ২১ লাখ ২০ হাজার টাকা, সাটুরিয়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ২৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা, সিংগাইর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৪০ লাখ ২৮ হাজার টাকা, হরিরামপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৪৮ লাখ ২২ হাজার টাকা, দৌলতপুরের ৪টি ইউনিয়নে ৩২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, ঘিওরে ৪টি ইউনিয়নে ২০ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং শিবালয় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ৩০ লাখ ৪০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এরমধ্যে এক কোটি ৯০ লাখ টাকার মাছ, ২ লাখ ২৪ হাজার টাকার রেণু পোনা এবং পুকুর, ঘের ও স্লুইসগেটসহ অবকাঠামোগত আরও ২৫ লাখ ১৫ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে জেলায় কতগুলো পুকুর রয়েছে, কতজন খামারি রয়েছেন এবং এবারের বন্যায় কতজন খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই জেলা মৎস্য অফিসে।

শিবালয় উপজেলার মৎস্য খামারি কামাল হোসেন বলেন, বন্যার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুকুরের চারপাশে নেট জাল দিয়ে ঘিরে রেখেছিলাম। কিন্তু তাতে কোনো কাজে আসেনি। জালগুলো ভেসে গিয়ে কয়েক লাখ টাকার কাতলা, নওলা মাছ বের হয়ে যায়।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের মাছচাষি রকিবুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর ধরেই পোনা থেকে সব ধরনের মাছের চাষাবাদ করি। আমি ১৮টি পুকুরে বিভিন্ন ধরনের মাছচাষ করছি। তবে এবারের বন্যায় আমার কয়েকটি পুকুরের পোনা ও বড় আকারের মাছ মিলে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

দৌলতপুর উপজেলার চকমিরপর গ্রামের তরুণ মৎস্য খামারি খোরশেদ বলেন, মাছ চাষে লাভবান হওয়ার বিষয়টি জেনেই এ বছর মাছচাষ শুরু করি। তবে বন্যার পানিতে আমার সব স্বপ্নই ভেসে গেছে। ব্যবাসার শুরুতেই বড় ধরনের ধাক্কা খেলাম।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, চলতি বছর জেলার ২৮টি ইউনিয়নে বন্যার পানিতে প্রায় ৩৮ হেক্টর পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অনেক খামারি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত এসব খামারিদের বিষয়ে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ কোনো সহযোগিতা করলে তা পর্যায়ক্রমে খামারিদের দেওয়া হবে।

সোহেল হোসেন/এমএসআর