রাজশাহীর তানোরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। শুক্রবার (০১ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। এরা সবাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানীর সমর্থক বলে জানা গেছে।

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার সাত ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য এই সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ান স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুসারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির অনুসারীরা। পরে পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পুলিশি পাহারায় সেখানে সভা করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।

আহতরা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক পাপুল সরকার, তানোর পৌর যুবলীগের সভাপতি রাজিব সরকার হিরো, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মৃদুল কুমার, কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দীন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন খান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক অধ্যক্ষ মিজান, আওয়ামী লীগ নেতা আকতার মাস্টার, মৃদুল সরকার, শম্ভুনাথ প্রমুখ। 

জানা গেছে, আগামী ১১ নভেম্বর উপজেলার সাত ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে বিশেষ বর্ধিত সভার আহ্বান করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা একরামুল হক। 

শুক্রবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ মিলনায়নে ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। সাত ইউনিয়নের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে দুপুরের পর থেকেই নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জড়ো হতে শুরু করেন। সভা শুরুর একপর্যায়ে সভায় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার সমর্থকদের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের অনুসারীদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষ হাতাহাতি ও মারামারিতে জড়িয়ে পড়লে সভার বাইরেও ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় তুমুল মারামারি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ি। এতে তছনছ হয়ে যায় মিলনায়তন।

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পংকজ চন্দ্র দেবনাথ ও তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল হাসানসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিতি হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে গোলাম রাব্বানীর অনুসারীরা উপজেলা পরিষদ চত্বরের পাশে পৌরসভা কার্যালয়ে অবস্থান নেন। তবে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী পুলিশি পাহারায় সভা শুরু করেন। এ সময় এমপি অনুসারী উপজেলার সাত ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম ও ঠিকানা জমা নেয়া হয়। 

এ বিষয়ে জানতে সভার প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী বলেন, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এক চিঠিতে ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর তালিকা দিতে বলেন। সে অনুযায়ী সভা ডাকা হয়। এ সভা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মতিতেই ডাকা হয়। কিন্তু আমি সভাপতি হলেও আমাকে সভাপতিত্ব করতে দেবে না জেলা আওয়ামী লীগ। এ কারণে আমি ওই সভায় যাইনি। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও আমার সমর্থকরা সেখানে গেলে তাদের ওপর হামলা করা হয়। 

তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মঞ্চে ওয়ার্কার্স পার্টির উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু বাক্কারকে বসানো হয়। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েও মঞ্চে আমার জায়গা হয়নি। এতে আমার সমর্থকরা প্রতিবাদ করলে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সামনেই আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমাদের মঞ্চে ওঠা দেখেই তারা হইচই শুরু করে। পরে তারা মারপিট করে। 

তিনি আরও বলেন, পরিকল্পিতভাবেই এমপি ও তার ভাতিজা উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশীদ ময়না হামলা করিয়েছে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আমার পায়ের রগ কেটে গেছে। তাদের প্রার্থীর নাম এককভাবে পাঠাতেই পরিকল্পিতভাবে এ হামলা করেছে। এতে অন্তত ১২ নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। 

এ বিষয়ে তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল হাসান বলেন, বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।

 ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরআই/আরএআর